পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন || সহকারী ম্যানেজার (01-08-2019) || 2019

All

'চীন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধ এবং এর বৈশ্বিক প্রভাব

চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দুটি শক্তিধর রাষ্ট্র। এই দুটি দেশ তাদের পার্শ্ববর্তী ভূ-রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ
জোরালো ভূমিকা রাখে। বিশ্ব রাজনৈতিক অঙ্গনে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দুটি মহাশক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। জাতিসংঘের P-5 ভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দুটি দেশ-ই রয়েছে। সমগ্র বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের যেমন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দাপট রয়েছে, ঠিক তেমনি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ চীন ও সমগ্র বিশ্বব্যাপী তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা প্রদর্শন করছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামনে ভূ-রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চীন এখন হুমকিস্বরূপ। অর্থনৈতিকভাবে দ্বিতীয় বিশ্ব পরাশক্তি এখন যেকোনো মূহুর্তে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বব্যাংক পরিচালনায় যুক্তরাষ্ট্র একটি বড় ভূমিকা পালন করে। যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দেয়ার জন্য সম্প্রতি Asia Infrastructure Investment Bank (AIIB) নামে একটি ব্যাংক গঠিত হয়েছে যার মূল ও প্রধান অর্থদাতা চীন এবং এর সদর দপ্তরও চীনে অবস্থিত। অর্থাৎ বিশ্ব অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী হলো চীন।

কিন্তু বর্তমান সময়ে দুই মহাশক্তিধর রাষ্ট্র যখন যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়, তখন তা অস্ত্রের মাধ্যমে না হয়ে তা হয় বাণিজ্যের মাধ্যমে। বাণিজ্যের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনৈতিক অঙ্গনে কোনো রাষ্ট্রের পণ্যের বর্জন করার মাধ্যমে যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে। বিশ্বে এখন চীনা পণ্যে সয়লাব হচ্ছে। বিশ্বের এমন কোনো রাষ্ট্র পাওয়া যাবে না যে দেশে চীনা পণ্য নেই। স্বল্প মূল্যে ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র রপ্তানিতে চীনের জুড়ি নেই। আফ্রিকার দেশগুলোতে চীন যে পরিমাণ বিনিয়োগ করছে এবং তাদের Cheap labor কে যেভাবে ব্যবহার করে আফ্রিকান বাজার দখল করছে, তাতে আমেরিকার মতো বিশ্ব পরাশক্তির জন্য হুমকিস্বরূপ। এরই প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র উদীয়মান এই অর্থনীতির দেশটিকে ২০ হাজার কোটি ডলার মূল্যের চীনা পণ্যের উপর ১০ শতাংশ হারে শুল্কের প্রস্তাব করে এর ফলে আমেরিকায় এখন চীনা পণ্য প্রবেশে ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রদান করতে হবে ।

বিশেষ করে চীনের পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বেশ অনুকূল। আমেরিকা যেহেতু চীনের বিভিন্ন পণ্য দ্রব্যের উপর শুল্কারোপ করেছে যা চীনের রপ্তানি ব্যয়কে অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সকল ক্ষেত্রে আমেরিকা প্রশাসন এশিয়া মহাদেশের বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনামের মতো দেশ হতে পণ্য আমদানির পরিমাণ বাড়িয়েছে। অর্থাৎ পোশাক আমদানির ক্ষেত্রে আমেরিকা এখন চীনকে ছেড়ে বাংলাদেশের মতো সস্তা শ্রমের দেশের পোশাক আমদানি করছে। এছাড়া চীনের যে ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য আগে আমেরিকায় প্রবেশ করতো; এই সকল ট্যারিফের কারণে চীনের পণ্য এখন আর সহজলভ্য নয়। এখন তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এখন সয়লাব হয়েছে। অর্থাৎ এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এখন অন্যান্য দেশগুলোর পণ্যগুলো প্রবেশ করছে যা তাদের দেশের প্রবৃদ্ধিতে সাহায্য করছে। মুক্ত বাজার অর্থনীতির এই যুগে এখন কোনো দেশ-ই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। যে দ্রব্য উৎপাদন ব্যয় বেশি তা অন্য দেশ হতে আমদানি করতে হয়, আর যে দ্রব্য উৎপাদন খরচ কম তা বেশি বেশি উৎপাদন করে অন্য দেশে রপ্তানি করতে হয়। তাই বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কোন দেশ যদি চায় যে অন্যের নিকট হতে পণ্য আমদানি করবে না, তবে তার সামনে অনেক বিকল্প সমাধান থাকে ।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের এই বাণিজ্য যুদ্ধে এশিয়ার দেশ হিসেবে ভারত ও বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারে। বাণিজ্য বৈষম্য লাঘবে এই বাণিজ্য যুদ্ধ একটি যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে। তবে পাশাপাশি এই কথাও মনে রাখা দরকার যে বিশ্ব রাজনৈতিক অঙ্গনে চীনের উত্থান দমিয়ে রাখার জন্য আমেরিকা অনেক মিত্র রাষ্ট্র গড়ে তুলছে। পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ানের নাম উল্লেখযোগ্য ।

সবশেষে বলা চলে যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যের যে যুদ্ধ সংগঠিত হচ্ছে তা আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আপাতদৃষ্টিতে লাভবান মনে হলেও ক্ষেত্রবিশেষ তা ক্ষতির কারণ হতে পারে। কারণ বাংলাদেশের পণ্যের একটি বড় অংশই চীন হতে আমদানি করা হয়

Related Sub Categories