ভূমি একটি মৌলিক প্রাকৃতিক সম্পদ, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবিকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আরো গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের মতো একটি ভূমি বুভুক্ষু দেশের জন্য, যেখানে মাথাপিছু জমির পরিমাণ বিশ্বে সর্বনিম্ন।
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার আবাসন, শিল্পায়ন, নগরায়ণ, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও অন্যান্য উন্নয়নযজ্ঞের জন্য প্রতিনিয়ত জমির প্রয়োজন হচ্ছে । নদীগর্ভেও বিলীন হয়ে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ জমি। এসব কারণে প্রতি বছর মোট জমির ১ শতাংশ বা প্রায় ৮২ হাজার হেক্টর জমি কমে যাচ্ছে। তাই দেশের চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গতি সচল রাখতে ভূমির পরিকল্পিত ব্যবহার ও
ব্যবস্থাপনা জরুরি ।
ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও সামরিক শাসনামলের পুরাতন ভূমি আইনসমূহ সংস্কারপূর্বক সেগুলোকে যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ ও উন্নয়ন চাহিদার প্রয়োজনে নতুন কিছু আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। ভূমিসংক্রান্ত প্রতারণা ও নানাবিধ অপরাধ প্রতিরোধের জন্য ভূমিসংক্রান্ত অপরাধ আইন, কৃষিজমি সুরক্ষা ও পরিকল্পিত ভূমি ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য ভূমি ব্যবহার আইন, হয়রানিমুক্তভাবে অনলাইনে জমির খাজনা প্রদানের জন্য ভূমি উন্নয়ন কর আইন, ভূমির সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভূমি সংস্কার আইন ইত্যাদি নতুনভাবে প্রণয়ন করা হচ্ছে। অর্পিত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় জটিলতা নিরসনে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া আরো স্বচ্ছ ও জনবান্ধব করার জন্য
বিধিমালা করা হচ্ছে। ভূমি অফিসে হয়রানি ও কাজের দীর্ঘসূত্রিতার উল্লেখযোগ্য কারণ দালালের দৌরাত্ম্য, দলিলপত্রের জাল-জালিয়াতি এবং প্রচলিত এনালগ সেবা পদ্ধতি। এসব অনিয়ম দূর করার অন্যতম উপায় হচ্ছে সেবাসমূহের অটোমেশন। একটি উচ্চ মানসম্পন্ন ইন্টারঅপারেবল সফটওয়্যারের মাধ্যমে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সমজাতীয় সেবার সঙ্গে সমন্বয় করে সব ধরনের ভূমিসেবাকে অটোমেশন করা হবে।
ইতিমধ্যে অনেকগুলো সেবার অটোমেশন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া সারা দেশে ই-নামজারি শুরু হয়েছে। এখন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলে ঘরে বসেই অনলাইনে ই-নামজারির আবেদন করা যায়। ই-নামজারির সফল প্রয়োগের জন্য বাংলাদেশের প্রথম কোনো প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয় ২০২০ সালে জাতিসংঘের পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। জমির মালিকানার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণক হচ্ছে খতিয়ান বা পর্চা, যা জমি ক্রয়-বিক্রয় বা হস্তান্তরের সময় প্রয়োজন হয়। রেকর্ডসমূহ অনেক পুরাতন ও জরাজীর্ণ হওয়ায় সেগুলো রেকর্ডরুমসমূহে সংরক্ষণ করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সিএস রেকর্ড অনেক পুরাতন হওয়ায় এগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যেগুলো আছে সেগুলো এত দুর্বল যে ধরা বা নাড়াচাড়া করা যায় না। ফলে একদিকে এগুলো সংরক্ষণের অযোগ্য হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে নাগরিকদেরও সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তাই সব খতিয়ান (প্রায় সাড়ে ৪ কোটি) ডিজিটাইজড করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রথম পর্যায়ে ২১টি জেলার সব খতিয়ান অনলাইনে আপলোড করা হয়েছে। এখন এসব জেলার নাগরিকগণ অনলাইনে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে তাদের জমির খতিয়ান দেখতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় ফি পরিশোধ সাপেক্ষে অনলাইনেই তা সংগ্রহ করতে পারবেন।
জমির খাজনা প্রদানের জন্য ভূমি অফিসে গেলে অনেক ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণসহ ভোগান্তির শিকার হতে হয়। তাই অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৯টি জেলায় পাইলটিং করা হচ্ছে, যা পর্যায়ক্রমে সারা দেশে চালু করা হবে। ফলে অনলাইন বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জমির খাজনা প্রদান করা যাবে ।
যত্রতত্র ঘরবাড়ি, ইটভাটা, শিল্পকারখানা ও অপরিকল্পিত স্থাপনা করার ফলে একদিকে মূল্যবান তিন ফসলি জমি হারিয়ে যাচ্ছে; অন্যদিকে বন্যা, জলাবদ্ধতা বৃদ্ধিসহ প্রতিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এজন্য প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী মৌজা ও প্লটভিত্তিক ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই জোনিং ম্যাপ তৈরির জন্য হাইরেজুলেশন স্যাটেলাইট ইমেজ, রিমোট সেন্সিং ডাটা ও জিপিএসসহ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। এই জোনিং ম্যাপে কৃষি, জলাধার, বন, পাহাড়, বসতি, শিল্প, অর্থনৈতিক এলাকা ইত্যাদি চিহ্নিত করা থাকবে। ভূমি ব্যবহার আইন প্রয়োগ করে দেশের মূল্যবান কৃষিজমি, জলাধার, বনভূমি ও পাহাড়-টিলা রক্ষা করা হবে এবং শিল্পায়ন তথা উন্নয়নকাজের জন্যও প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান করা হবে ।
ভূমি জরিপে দুর্নীতি ও দীর্ঘসূত্রতা একটি ব্যাপক চর্চিত বিষয়। তাই জরিপকাজে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনতে সরকার ডিজিটাল জরিপের উদ্যোগ নিয়েছে। এখন থেকে প্রচলিত ম্যানুয়াল জরিপের পরিবর্তে ডিজিটাল জরিপ করা হবে যা বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে বা বিডিএস নামে পরিচিত হবে। এই জরিপে ইটিএস মেশিন, ড্রোন, জিপিএস ইত্যাদি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে বিধায় শুদ্ধতার হার অনেক বেশি হবে। প্রচলিত পদ্ধতিতে যেখানে ১০-২০ বছর সময় লাগত, সেখানে ডিজিটাল জরিপে মাত্র ২-৩ বছর সময় লাগবে।
সেবা নিতে গিয়ে হয়রানি হলে তার প্রতিকার বা সেবাসংক্রান্ত জরুরি তথ্য জানার জন্য ভূমিসেবা হটলাইন চালু করা হয়েছে। এই হটলাইনের সঙ্গে জাতীয় ৩৩৩ হটলাইনের সমন্বয় করা হবে। ভূমিসংক্রান্ত যাবতীয় ফি অনলাইনে পরিশোধের সুবিধার্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে চালু করা হয়েছে। ফলে নাগরিকগণ ভূমিসংক্রান্ত সব ফি মোবাইল ব্যাংকিং বা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারবেন। এছাড়া ভূমি মালিকদের একক শনাক্তকারী নম্বর প্রদান করা হবে, যাতে সারা দেশে তার সব জমি একক হোল্ডিং ও খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত হয়। ফলে জমির সিলিং সীমা এড়ানো, খাজনা ফাঁকি দেওয়া এবং জমির তথ্য গোপন করা সম্ভব হবে না ।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মনোগ্রামে কয়টি তারকা আছে?
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মনোগ্রামে ৪টি তারকা আছে ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম তারিখ কত?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বর্তমান গোপালগঞ্জ (সাবেক ফরিদপুর) জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
NAPE এর পূর্ণরূপ কী?
NAPE এর পূর্ণরূপ National Academy for Primary Education.
বিশ্ব মানবাধিকার দিবস কোনটি?
বিশ্ব মানবাধিকার দিবস ১০ ডিসেম্বর।
র্যাডক্লিফ রেখা কী?
১৯৪৭ সালে স্যার সাইরিন র্যাডক্লিফ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে 'লাইন অব কন্ট্রোল' সীমারেখার দিয়ে বিভক্ত করেন। র্যাডক্লিফ লাইনগুলো হলোঃ বাংলাদেশ-ভারত; বাংলাদেশ-মিয়ানমার; ভারত-পকিস্তান।
ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোর নাম লিখুন।
৪টি জেলা নিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ গঠিত। এগুলো হলোঃ ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোণা এবং শেরপুর ।
বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের নাম কী?
বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের গণভবন। আর রাষ্ট্রপতির বাসভবনের নাম 'বঙ্গভবন'।
রাশিয়া কোন মহাদেশে অবস্থিত?
রাশিয়া এশিয়া (৭৭%) এবং ইউরোপ (২৩%) উভয় মহাদেশে অবস্থিত।
বাংলাদেশ কবে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে?
জাতিসংঘের ২৯তম অধিবেশনে ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে ।
কোন সংস্থা ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে?
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় ।
জামালপুরের নকশিকাঁথা
নকশিকাঁথা জামালপুরের বিত্তহীন দরিদ্র নারীদের আত্নবিশ্বাসী করে তুলেছে। স্বউদ্যোগে নকশিকাঁথা বুনিয়ে স্বাবলম্ভী হচ্ছে হতদরিদ্র নারীরা। হাতের কারুকাজ করা নকশীকাঁথা দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। জেলায় ইতোমধ্যে ১০ হাজার নারীর আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। নারীদের সূচীকর্মের নান্দনিক ঐতিহ্য নকশিকাঁথা এখন শুধু ব্যবহারের জন্যই নয়, মানুষের কাছে সৌখিন ও সৌন্দর্যের উপাদানে পরিণত হয়েছে। বিত্তহীন দরিদ্র নারীদের স্বাবলম্ভী হওয়ার পথ দেখিয়েছে সূচীকর্ম। নকশিকাঁথার ঐতিহ্যকে লালন করে হস্তশিল্পের প্রসার ঘটেছে জামালপুরে। নান্দনিকতার ছাপ পড়েছে হস্তশিল্পেও। নকশিকাঁথা পাশাপাশি পরিধানের বস্ত্র হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে নারীদের হাতের করুকাজ করা থ্রীপিছ, শাড়ি, ওড়না, বেড কভার, কুশন কভার, ওয়াল মেট, বালিশের ওয়ার, শাল ও চাদর। নকশিকরা পাঞ্জাবি, ফতুয়া, টিসার্ট গেঞ্জিসহ নানা রকমের পরিধানের বস্ত্রের প্রতিও আকর্ষণ বেড়েছে। চাহিদার ব্যাপ্তি দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দিনে দিনে বস্ত্র খাতে নকশিকাঁথা তথা হস্তশিল্পের দ্রুত প্রসার ঘটছে ।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ
১৯৭২ সালের মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। ৪৪ হেক্টর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এ সৌধের স্থাপত্য নকশা অতুলনীয়। এটি একটি বিশাল বিমূর্ত ভাস্কর্য। এ ভাস্কর্যের উচ্চতা একশত পঞ্চাশ ফুট। এতে মোট সাতটি ফলক আকৃতির স্তম্ভ রয়েছে। এই সাতটি ফলকের মাধ্যমে বাংলাদেশের শক্তি সংগ্রামের সাতটি স্তরকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬ শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ১৯৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যূত্থান, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ- এই সাতটি ঘটনাকে স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিক্রমা হিসাবে বিবেচনা করে সৌধটি নির্মিত হয়েছে। স্মৃতিসৌধটির সাতটি ফলক ত্রিকোণ আকারে উপরে উঠে গেছে। মূল সৌধের বাম পাশে সৌধ চত্বর। এখান স্বাধীনতা যুদ্ধে নাম না জানা ১০ জন শহীদের ১০টি সমাধি রয়েছে। ডান পাশে রয়েছে পুষ্পবেদি। তিনদিক ঘিরে থাকা কৃত্রিম লেক ও চারদিকের সবুজের সমারোহ সমগ্র এলাকাটিকে করেছে আরো সৌন্দর্য মন্ডিত।