অগাকাণ্ড
অগাকাণ্ড = নিরেট বোকা/ নির্বোধ
অষ্টকপাল
অষ্টকপাল = হতভাগ্য
আঠার মাসে বছর
আঠার মাসে বছর = দীর্ঘসূত্রিতা
এক ঘরে গিন্নি
এক ঘরে গিন্নি = কর্তৃত্ব
এলবেলে
এলবেলে = নিকৃষ্ট
অধিত্যকা
অধিত্যকা = উপত্যকা
অনুরক্ত
অনুরক্ত = বিরক্ত
অনুমোদিত
অনুমোদিত = অননুমোদিত
আরোহন
আরোহন = অবতরণ
ভূমিকা:
বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত শ্রমনির্ভর। দেশের জনসংখ্যার বিশাল অংশ শ্রমশক্তিতে পরিণত হয়েছে, এবং এসব মানুষ দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন শিল্প যেমন পোশাকশিল্প, কৃষি, নির্মাণ, ও পরিষেবা খাতে বিপুল সংখ্যক মানুষ কর্মরত আছেন। এছাড়া প্রবাসী শ্রমিকরাও রেমিট্যান্সের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। তবে, নানা সংকট ও সীমাবদ্ধতার কারণে এই শ্রমবাজার কাঙ্ক্ষিত মান অর্জন করতে পারছে না, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথে বাধা সৃষ্টি করছে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি কমিয়ে দিচ্ছে।
বাংলাদেশের শ্রমবাজারের সংকট:
বাংলাদেশের শ্রমবাজারে বেশ কিছু সংকট রয়েছে যা শ্রমশক্তির যথাযথ ব্যবহারকে ব্যাহত করছে। এই সংকটগুলো নিচে আলোচনা করা হলো:
কর্মসংস্থানের অভাব: দেশের বিশাল জনসংখ্যার জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির চাহিদা অনেক বেশি। তবে যোগ্যতার অভাব ও নির্দিষ্ট দক্ষতার অভাবে অনেকেই কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন না।
নিম্ন মজুরি: অনেক শ্রমিক কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হন, বিশেষত পোশাকশিল্প ও কৃষি খাতে। এতে শ্রমিকদের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।
দক্ষতার অভাব: প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত ও কারিগরি দক্ষতার অভাবে কর্মীদের পেশাগত উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে দক্ষ কর্মী তৈরি সম্ভব হচ্ছে না।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চ্যালেঞ্জ: দেশের একটি বড় অংশের শ্রমিক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। এ ধরনের খাতে চাকরির সুরক্ষা নেই, শ্রমিকদের অধিকার প্রায়শই উপেক্ষিত হয়, এবং কাজের পরিবেশও মানসম্মত নয়।
বহির্গমন সংকট: দেশের উচ্চ বেকারত্বের কারণে প্রচুর সংখ্যক মানুষ বিদেশে কর্মসংস্থান খুঁজে নিচ্ছেন। তবে অনেক সময় তারা সঠিক প্রশিক্ষণ ছাড়া বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন, যার ফলে প্রায়ই তারা প্রতারণার শিকার হন বা কাজে টিকে থাকতে সমস্যায় পড়েন।
সমাধান:
বাংলাদেশের শ্রমবাজারের সংকট নিরসনে কিছু কার্যকর সমাধান গ্রহণ করা যেতে পারে যা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে। এই সমাধানগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন: দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। এতে কর্মীরা দক্ষতা অর্জন করে কর্মক্ষেত্রে আরও মানসম্মত অবদান রাখতে পারবেন।
মজুরি কাঠামোর উন্নতি: শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে হবে। মজুরি কাঠামো উন্নত হলে শ্রমিকদের জীবিকা আরও সহজ হবে, যা উৎপাদনশীলতাকে বৃদ্ধি করবে।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা: অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। এই খাতের শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা এবং কাজের পরিবেশ উন্নয়নে আইন ও নীতিমালা গ্রহণ করা উচিত।
প্রবাসী শ্রমিকদের সঠিক প্রশিক্ষণ: বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য সঠিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে, তাদের কর্মদক্ষতা বাড়বে এবং প্রতারণার শিকার হওয়ার আশঙ্কাও কমবে। একইসাথে দক্ষ জনবল হিসেবে তারা দেশের জন্য আরও বেশি রেমিট্যান্স আয় করতে সক্ষম হবেন।
স্থানীয় শিল্পখাতের প্রসার: দেশের ভেতরেই নতুন শিল্পকারখানা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা দরকার। এতে বেকারত্ব কমবে এবং অর্থনীতির স্বয়ংসম্পূর্ণতা বাড়বে।
উপসংহার:
বাংলাদেশের শ্রমবাজারের উন্নয়ন দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। দক্ষ ও সুসংগঠিত শ্রমশক্তি অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করতে সক্ষম। শ্রমবাজারের সংকট নিরসনের জন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যক্তি পর্যায়েও সক্রিয় ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে।
মানুষের জীবনের প্রকৃত মূল্য তার কর্মে নিহিত। বয়স কেবলমাত্র একটি সংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করে; এটি কারো সার্থকতা বা মহত্ব নির্ধারণ করতে পারে না। একজন মানুষকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে তার সৃষ্টিশীলতা, নৈতিকতা ও মানবসেবামূলক কাজের প্রয়োজন। কালের বিবর্তনে যেসব ব্যক্তিরা অসামান্য কর্ম সম্পাদন করেছেন, তারা আজও মানুষের মনে জীবিত রয়েছেন। তাদের কর্ম তাদেরকে কালের গণ্ডি অতিক্রম করে অমরত্ব দান করেছে।
যেমন ধরুন, বিজ্ঞানী আইনস্টাইন, মানবসেবায় নিবেদিত মাদার তেরেসা, কিংবা কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর—তাদের শারীরিক অস্তিত্ব আর নেই, কিন্তু তাদের অবদান আমাদের জীবনের প্রতিটি স্তরে এখনো বিরাজমান। মানুষ তার জ্ঞান, বুদ্ধি ও কর্মদক্ষতা দিয়ে মানব সমাজে যে অবদান রাখে, সেটিই তাকে চিরকালীন পরিচিতি দেয়। বয়সের সীমাবদ্ধতার বাইরে কর্মই তাকে অনন্ত জীবন দান করে।
তাই একজন মানুষের জীবনের প্রকৃত সফলতা তার বয়স দিয়ে নয় বরং তার অর্জিত দক্ষতা ও তার কর্মের মাধ্যমে মাপা হয়।