শিক্ষিত ও অশিক্ষিত ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য হলো তাদের চিন্তা করার প্রক্রিয়া, মানসিকতা এবং আচরণ । শিক্ষা মানুষের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার জন্য। একজন শিক্ষিত ব্যক্তি যৌক্তিকভাবে জীবনের প্রতিটি পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা করে। একজন অশিক্ষিত ব্যক্তি একই কাজ করতে পারে বা নাও করতে পারে।

সাধারণত আমরা শিক্ষিত বলতে বুঝি যারা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া আর ডিগ্রি পাওয়া লোক। আর যারা স্কুল কলেজে পড়েননি তাঁদের আমরা অশিক্ষিত মনে করি। অর্থাৎ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া লোক = শিক্ষিত আর নিরক্ষর মানুষ = অশিক্ষিত । তবে নিরক্ষরতা আর অজ্ঞতাকে এক করে দেখার কোনও অর্থ হয় না। নিরক্ষর মানুষ অনেক তথাকথিত ‘শিক্ষিত’র চেয়ে সব অর্থে বেশি 'জ্ঞানী' হতে পারে। নিরক্ষর মানুষ হিসেবে মহৎ হতে পারেন আবার শিক্ষিত মানুষ দাঙ্গাবাজ ও বদমাস হতে পারেন। এর উল্টোটাও ঘটতে পারে।

শিক্ষাঃ শিক্ষা মানুষের আচরণিক পরিবর্তন আনয়নের প্রক্রিয়া। শিক্ষা দ্বারা মানুষের কাঙ্খিত পরিবর্তন আনয়নের চেষ্টা করা হয়। আমাদের দেশেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতই বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মধ্যে কাঙ্খিত পরিবর্তন আনয়নের জন্য শিক্ষার বিভিন্ন স্তরের প্রবর্তন করা হয়েছে। যেমন- প্রাথমিক শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা, স্নাতক, ভোকেশনাল, ধর্মীয় ও বয়স্ক শিক্ষা। মানুষের মধ্যে কাঙ্খিত আচরণিক পরিবর্তন আনয়নের পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনাকে শিক্ষা বলা যেতে পারে ।

শিখনঃ শিখন হচ্ছে শিক্ষার্থীর মধ্যে তার আচরণিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়া। প্রকৃত পক্ষে শিখনের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াটি আমরা Se সরাসরি প্রত্যক্ষ করতে পারি না। ব্যক্তির আচার আচরণ থেকে শিখনের ব্যাপারটা অনুধাবন করা যায়। শিখনের জন্য দরকার ব্যক্তির শারীরিক ও স্নায়ুবিক পরিবর্তন। শিখনের সাথে ব্যক্তির দৈহিক ও সামাজিক বিকাশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে । একজন কৃষককে উপকারী পোকা চিহ্নিত করতে শেখালে, সে যদি নির্ভুলভাবে উপকারী পোকা শনাক্ত করতে পারে, তাহলে আমরা বলব সে কৃষককে যা শিখতে বলা হয়েছিল সে তা শিখেছে অর্থাৎ তার শিখন হয়েছে। শিখনের প্রধান ভূমিকা হলো মানুষের নতুন জ্ঞান লাভের সাথে সাথে পুরাতন জ্ঞানকে সংশোধন করে শক্তিশালী করা।

শিক্ষার উদ্দেশ্য ও চাহিদার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক পরিবর্তন ও প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নের ফলে শ্রেণিকক্ষের শিক্ষণ-শিখনেও পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে । যুগোপযোগী ও আদর্শ শিক্ষণ-শিখন কার্যক্রম নিশ্চিত করতে একজন শিক্ষা কর্মকর্তা যেসকল ভূমিকা রাখতে পারেন তা নিম্নরূপঃ

  • শিক্ষকের পেশাগত উন্নয়ন এর মাধ্যমে ।
  • শ্রেণীকক্ষে আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষাদান করতে তা শিক্ষার্থীদের মনে স্থান করে নেয়। তাই শিক্ষকের উচিত শ্রেণীকক্ষকে আনন্দঘন করে তোলা ।
  • শিক্ষার্থীদের আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তনে সহায়তা করা।
  • যেসব কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের মনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে, সেগুলোর উল্লেখযোগ্য হলো ছাত্রছাত্রী উভয়কে সমানভাবে কর্মে সম্পৃক্ত করা, উপস্থাপনায় সমান সুযোগ দিয়ে ক্ষমতায়ন বিচার করা, সমানভাবে নেতৃত্বের সুযোগ সৃষ্টি করা, তথ্যপ্রযুক্তি শ্রেণীর ও উপকরণ ব্যবহারে সমান সুযোগ সৃষ্টি করা।
  • শিক্ষা পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন হতে হবে পরিকল্পিত এবং সুচিন্তিত। শিক্ষা পরিকল্পনার মূলে রয়েছে শিক্ষানো।
  • বয়স উপযোগী আকর্ষণীয় শিল্প উপকরণ শিক্ষায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।
  • মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের এমন সুযোগ দেয়া দরকার, যাতে শিক্ষার্থীরা অর্থের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে এবং নতুন নতুন ও বাস্তবভিত্তিক সমস্যা সমাধানের চ্যালেঞ্জের সন্মুখীন হতে তা সমাধানের চেষ্টা করে।
  • বর্তমান শতাব্দীর নতুন প্রজন্ম প্রবেশ করেছে দ্রুত, পরিবর্তনশীল এক নতুন পৃথিবীতে। বিজ্ঞান, টেকনোলজি, রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন শিক্ষাক্ষেত্রে সৃষ্টি করেছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ। আর এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধান ভূমিকা পালন করে শিক্ষক সমাজ। কারণ যুগোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমেই নতুন প্রজন্মকে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ কাঠামোর এ নতুন পৃথিবীর সঙ্গে খাপ খাওয়ানো সম্ভব।

প্রযুক্তি কথার অর্থ হলো টেকনোলজি। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারের কিছু সুবিধা রয়েছে এর সাথে কিছু অসুবিধাও রয়েছে। নিয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলোঃ

  • জ্ঞান বৃদ্ধি ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রযুক্তির প্রয়োজন।
  • শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার সকলের জীবনকে সহজ করে তোলে। প্রযুক্তির কল্যাণে অনেক দূরে থেকেও শিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব।
  • শিক্ষকের লেকচার সহ যাবতীয় শিক্ষা উপকরণ রেকর্ড করে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। তাই শিক্ষা কার্যক্রম হয়েছে আরো সহজতর। 
  • বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষকেেদর থেকে জ্ঞানার্জন করা যায় এবং বিশ্বের বিভিন্ন লাইব্রেরী থেকে ঘরে বসেই বই পড়া যায়। 
  • অডিও ভিজুয়াল শিক্ষা প্রদান শিক্ষাদান পদ্ধতিকে করেছে আরো আকর্ষণীয় ।

 

অসুবিধাঃ

  • অধিকমাত্রায় প্রযুক্তি নির্ভরশীলতা তৈরী করে।
  • মেধার অপব্যবহার হয়।
  • শিক্ষার্থীদের নিজেদের কর্মদক্ষতা হ্রাস করে।
  • প্রশ্নফাঁস সহ নানা ধরণের ঘটনা ঘটে।

শিক্ষা ক্ষেত্রে Test এর প্রচলিত বাংলা প্রতিশব্দ অভীক্ষা। বিখ্যাত শিক্ষাবিদ ম্যারী ও জয়সি ই. লিন এর মতে "পরীক্ষা গ্রহণের জন্য যে প্রশ্নপত্র বা উপকরণ বা কৌশল ব্যবহৃত হয় তাকে অভীক্ষা বলে” ।
অভিক্ষার বৈশিষ্ট্যঃ অভীক্ষা হলো একসেট প্রশ্ন বা কার্যের নির্দেশ যা শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করা হয় এসব প্রশ্নের উত্তর শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্রভাবে দিতে হয় বা এসব কার্যাবলী স্বতন্ত্রভাবে সম্পাদন করতে হয়। প্রাপ্ত ফল শিক্ষার্থীদের পরস্পরের মধ্যে শিক্ষাগত পার্থক্য নিরূপণে ব্যবহার করা হয় এবং অভীক্ষার ফল সংখ্যায় প্রকাশযোগ্য হয় ।

“টেকসই উন্নয়ন" এর প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করতে গেলে আমাদের প্রথমে জানতে হবে এর লক্ষ্যমাত্রা সমূহ। টেকসই উন্নয়নের ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা হলো: দারিদ্র্য বিমোচন; খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টির উন্নয়ন ও কৃষির টেকসই উন্নয়ন; সকলের অন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা; মানসম্পন্ন শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতকরণ; লিঙ্গ সমতা; সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা; সকলের জন্য জাপানি বা বিদ্যুতের সহজলভ্য করা; স্থিতিশীল ও অংশগ্রহণমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পূর্ণকালীন উৎপাদনমূলক কর্মসংস্থান ও কাজের পরিবেশ; স্থিতিশীল শিল্পায়ন এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা; দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় বৈষম্য হ্রাস, মানব বসতি ও শহরগুলোকে নিরাপদ ও স্থিতিশীল রাখা; সম্পদের দায়িত্বপূর্ণ ব্যবহার; জলবায়ু বিষয়ে পদক্ষেপ, টেকসই উন্নয়নের জন্য সাগর, মহাসাগর ও সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণ ও পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করা; ভূমির টেকসই ব্যবহার, শাস্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক সমাজ, সকলের জন্য ন্যায়বিচার, সকল স্তরে কার্যকর, জবাবদিহি ও অংশগ্রহণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য এ সব বাস্তবায়নের উপায় নির্ধারণ ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের স্থিতিশীলতা আনা
উল্লিখিত লক্ষ্যমাত্রা সমূহ দ্বারা আমরা খুব সহজেই বাংলাদেশে এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পারি। লক্ষ্যমাত্রা সমূহ বাস্তবায়ন করার দ্বারা আমরা আরো উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত হতে পারবো। আমাদের জীবনযাত্রার মান আরো বৃদ্ধি পাবে ।

Related Sub Categories