যা বলা হয় নি
যা বলা হয় নি = অনুক্ত ।
এখনো আসে নাই এমন
এখনো আসে নাই এমন = অনাগত ।
মৃতের মত অবস্থা যার
মৃতের মত অবস্থা যার = মুমূর্ষু ।
যে ব্যক্তি উপকারীর অপকার করে
যে ব্যক্তি উপকারীর অপকার করে = কৃতঘ্ন।
তামার বিষ
তামার বিষ (অর্থের কুপ্রভাব): তোমাকে তামার বিষে পেয়েছে, মানুষকে মানুষ মনে কর না ।
শাঁখের করাত
শাঁখের করাত (উভয় সংকট): সত্যকথা বললে বাবার ক্ষতি, আবার মিথ্যাকথা বললে মায়ের ক্ষতি, আমার হয়েছে শাঁখের করাতের অবস্থা ।
অরণ্যে রোদন
অরণ্যে রোদন (নিষ্ফল আবেদন): মামুনের নিকট চাঁদা চাওয়া অরণ্যে রোদন মাত্র।
দুধের মাছি
দুধের মাছি (সুসময়ের বন্ধু): সুদিনে দুধের মাছির অভাব হয় না, কিন্তু দুর্দিনে একজনও মিলে না ।
সাপে নেউলে
সাপে নেউলে = সাপে ও নেউলে (অলুক দ্বন্দ্ব সমাস)।
মনমাঝি
মনমাঝি = মন রূপ মাঝি (রূপক কর্মধারয় সমাস)।
প্রাণপ্রিয়
প্রাণপ্রিয় = প্রাণ হতে প্রিয় (পঞ্চমী বা অপাদান তৎপুরুষ)।
রাজনীতি
রাজনীতি = রাজার নীতি (৬ষ্ঠ তৎপুরুষ সমাস)।
পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের প্রায় ৪৭% লোক কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষির ওপর নির্ভরশীল থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উপ-খাত হল বন। বৃক্ষ মানুষের জীবনের জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বন আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য। জাতীয় অর্থনীতি এবং আবহাওয়া ও জলবায়ুসহ প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বনায়নের গুরুত্ব অপরিসীম।
শত শত বছর ধরে বনের মাটিতে আপনা থেকেই জন্মায় বৃক্ষ, পুষ্টিকর নানান ধরনের শাক সবজি ও ফলমূল। জীব জন্তুৰ অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র বন। বাংলাদেশে সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী মোট বন ভূমির পরিমাণ প্রায় আঠারো শতাংশ। দেশের - দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র উপকূলবর্তী সুন্দরবন, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের বনভূমি, ময়মনসিংহ, গাজীপুর টাঙ্গাইল জেলা এবং রংপুর ও দিনাজপুরের কিছু অঞ্চল। সুন্দর বন বাদ দিলে বন বলতে যা অবশিষ্ট থাকে তা সামান্যই। ওয়াল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের মতে, এর পরিমাণ মাত্র পাঁচ শতাংশ ।
জনসংখ্যার চাপে বনভূমির পরিমাণ ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বনজ সম্পদ। উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের বনভূমির পরিমাণ নেমে আসায় এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে আবহাওয়ায়। বাতাস দূষিত হচ্ছে মাটি খাদ্য, ঔষধ শিল্পের কাঁচামাল, শক্তি ও পরিবেশ সেবার যে অংশ আসে বন থেকে বৃক্ষ নিধনের ফলে সংকটের মুখোমুখি। পর্যাপ্ত বনভূমি না থাকায় অনাবৃষ্টি দেখা দিচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বিলীন হয়ে যাচ্ছে অতুলনীয় সবুজ সৌন্দর্য।
জাতীয় অর্থনীতি ও পরিবেশের ভারসাম্য টিকিয়ে রাখতে দেশের বনজ সম্পদ সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ ও বনজ সম্পদের উন্নয় অত্যন্ত জরুরি। আর বাংলাদেশে রয়েছে বনায়নের বিপুল সম্ভাবনা। এ সম্ভাবনাকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগাতে হবে। এ জন্যে যা করণীয় তা হলোঃ
০১. দেশীয় অর্থকরী বৃক্ষ রোপণের ব্যবস্থা করতে হবে
০২. বিনামূল্যে সরবরাহ করতে হবে বীজ ও চারা ।
০৩. নদীর কিনারা ও সড়কের দুপাশে গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
০৪. বনভূমির গাছকাটা রোধ করতে হবে।
০৫. অপরিণত গাছকাটা বন্ধ করতে হবে।
০৬. প্রয়োজনে গাছ কাটা হলে সে অঞ্চলে নতুন চারাগাছ লাগাতে হবে।
০৭. বনভূমি থেকে কাঠের চোরাচালান বন্ধ করতে হবে।
০৮. গ্রামবাসীকে খাদ্য ফল জ্বালানি ইত্যাদি আহরণ উপযোগী বিভিন্ন ধরনের বৃক্ষরোপন করতে হবে।
০৯. সরকারি ও বেসরকারি সহায়তায় বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যায় অংশগ্রহণকারীদের আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ দিয়ে উৎসাহিত করতে হবে।
১০. সামাজিক বনায়ন সম্পর্কিত সকল বিষয় তদারকি করার জন্যে ওয়ার্ড মেম্বারের নেতৃত্বে শিক্ষক, সমাজকর্মী, মসজিদের ইমাম প্রমুখের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বনায়নের জন্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যে বিভিন্ন মেয়াদে জনগণকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। জনসাধারণের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে চারা। তবে বাংলাদেশের সরকারি বনভূমিতে যে বনায়ন কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে তা পরিবেশের জন্যে ক্ষতিকর। যেমনঃ দেশীয় প্রজাতির গাছ নিশ্চিহ্ন করে সেখানে রাবার, সেগুন, আকাশিয়া প্রভৃতির শিল্প বন তৈরি করা হচ্ছে। বিদেশি প্রজাতির গাছের সংগে ক্ষতিকর অনেক কীটপতঙ্গ আসে। এধরনের গাছ মাটি থেকে পানি শোষণ করে নেয় বলে আশে পাশের জমিতে পানির পরিমাণও কমে যায়। পার্বত্য চট্টগ্রাম, মধুপুর প্রভৃতি পার্বত্য এলাকায় রাবার চাষ এবং বাণিজ্যিক ও শিল্প বনায়নের কারণে অধিক মাত্রায় মাটিক্ষয় ও পানির স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। এসব অঞ্চলে বসবাসরত অধিবাসীরা বনাঞ্চল থেকে তাদের প্রয়োজনীয় শাক-সবজি; ফলমূল ও নির্মাণ সামগ্রী সংগ্রহ করতে পারছে না। অনেকক্ষেত্রে ঐতিহ্যগত ভূমি অধিকার থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রাণীর অস্তিত্ব ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছপালার কোনো বিকল্প নেই। গাছ প্রস্বেদন প্রক্রিয়া ও বাষ্পীভবনের মাধ্যমে আবহাওয়া বিশুদ্ধ রাখে। মাটির উর্বরতা বাড়ায়, মাটির ক্ষয়রোধ করে ।
অর্থাৎ মানুষের বসবাস উপযোগী ভারসাম্যপূর্ণ পৃথিবী বৃক্ষেরই অবদান। তাই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশকে বাঁচানো ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বনায়নের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর বনায়নের জন্যে প্রয়োজন জনগণের সচেতনতা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। পরিকল্পিত ও সঠিক বনায়নের মাধ্যমেই নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।