পুলিশ 'চোর' ধরেছে
পুলিশ চোর ধরেছে। = কর্মে শূন্য বিভক্তি ।
'ব্যায়ামে' শরীর ভালো থাকে।
ব্যায়ামে শরীর ভালো থাকে। = করণে ৭মী ।
'টিফিন' খেয়ে নাও
টিফিন খেয়ে নাও । = কর্মে শূন্য
'জননীর' সেবা কর
জননীর সেবা কর । = সম্প্রদানে ষষ্ঠী।
অধীনস্ত কর্মচারীরা এ কাজ করেছে।
অধীনস্ত কর্মচারীরা এ কাজ করেছে।
= অধীন কর্মচারীরা এ কাজ করেছে।
দুষ্কৃতকারীরা সমাজের শত্রু
দুষ্কৃতকারীরা সমাজের শত্রু।
= দুষ্কৃতকারী সমাজের শত্রু।
শামসুল রহমান বাংলাদেশের একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ছিলেন।
শামসুর রহমান বাংলাদেশের একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ছিলেন।
= শামসুর রাহমান বাংলাদেশের একজন শ্রেষ্ঠ কবি ছিলেন।
ধৈর্যতা, সহিষ্ণুতা মহত্বের লক্ষন ।
ধৈর্যতা, সহিষ্ণুতা মহত্বের লক্ষন ।
= ধৈর্য, সহিষ্ণুতা মহত্ত্বের লক্ষণ।
এ দায়িত্ত আমাকে দিও না।
এ দায়িত্ত আমাকে দিও না।
= এ দায়িত্ব আমাকে দিও না।
অনুসন্ধান করতে ইচ্ছুক
অনুসন্ধান করতে ইচ্ছুক = অনুসন্ধিৎসু ।
যার অন্য কোন উপায় নেই
যার অন্য কোন উপায় নেই = নিরুপায় (যার অন্য উপায় নেই = অনন্যোপায়)।
মুক্তি পেতে ইচ্ছুক
মুক্তি পেতে ইচ্ছুক = মুমুক্ষু ।
যা বাক্যে প্রকাশ করা যায় না
যা বাক্যে প্রকাশ করা যায় না = অনির্বচনীয়
যার কোথাও ভয় নেই
যার কোথাও ভয় নেই = অকুতোভয়
বাঙালি জীবনের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা বৈপ্লবিক যুগান্তরের সম্ভাবনায় তাৎপর্যবহ ও সুদূরপ্রসারী। ভাষা-আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তানি স্বৈরশাসন-বিরোধী প্রতিটি আন্দোলনের অনিঃশেষ চেতনা আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনের মতো শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রেও যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধন করেছে। স্বাধীনতাযুদ্ধের গণজাগরণ ও বৈপ্লবিক চেতনার স্পর্শে এক অপরিমেয় সম্ভাবনায় উজ্জীবিত হয়ে ওঠে আমাদের সাহিত্যলোক ৷ সেই উজ্জীবনী শক্তি একাত্তরের রক্তস্নাত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়ে বর্তমান সময়েও বহমান। সংগত কারণেই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আমাদের জীবনে ও সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের অবদানকে নতুন করে মূল্যায়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। স্মৃতি ও বিস্মৃতির দোলাচলে বাঙালি জাতিসত্তা যেরূপ বিভ্রান্তি ও সংকটের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, জাতীয় জীবনের এই পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ইতিহাসের সেই রেনেসাঁসীয় গতি ও শক্তির পুনঃপর্যবেক্ষণ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কেবল বর্তমান প্রজন্মের জন্যেই নয়, বিভ্রান্তিপ্রবণ সমাজমানসের জন্যও এই পর্যবেক্ষণের উপযোগিতা কম নয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির জাতীয় জীবনে অপরিমেয় ত্যাগ, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও সাফল্যের সূর্যোদয়ে গৌরবময়। ইতিহাসের যে গতিশীল ও দ্বন্দ্বময় ধারা পলাশীর বিপর্যয় (১৭৫৭), সিপাহি বিদ্রোহ (১৮৫৭), কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বিভেদের রাজনীতি, পাকিস্তান আন্দোলন, ১৯৪৭-এর অসংগত রাজনৈতিক মীমাংসা, ভাষা- আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান প্রভৃতি ঘটনাক্রমের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জীবনে সেই ঐতিহাসিক নিয়মেই চরম পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় সামূহিক অস্তিত্বের প্রশ্নে সমগ্র জাতি এক অভিন্ন বিন্দুতে মিলিত হয় এবং নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি তার আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতাকে করতলগত করে। সুদীর্ঘকালের ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ ও নিপীড়নের ফলে জাতির সৃষ্টিশীল চেতনায় যে ক্ষোভ, প্রতিবাদ, রক্তক্ষরণ, সংগ্রামশীল জীবনদৃষ্টি এবং ভবিষ্যৎস্পর্শী কল্পনার জন্ম হয়েছিল, যুদ্ধের রক্তাক্ত অভিজ্ঞতা ও সাফল্যে তার গঠনমূলক রূপান্তরের পথ সুপ্রশস্ত হয়। স্বাভাবিকভাবেই যুদ্ধোত্তরকালে বাংলাদেশের সামগ্রিক জীবনকাঠামোতে গুণগত পরিবর্তন ছিল প্রত্যাশিত, প্রয়োজনীয়; কিন্তু রক্তাক্ত যুদ্ধের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ জাতীয় জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তনের গতি অল্প কিছুকালের মধ্যেই হয়ে পড়ল অবরুদ্ধ, রক্তাক্ত। কেবল পরিমাণগত পার্থক্য ছাড়া পাক আমলের আর্থ-সামাজিক কাঠামোর কোনো গুণগত পরিবর্তন জাতীয় জীবনে ঘটেনি। স্বাধীনতা-উত্তর কয়েক বছরের মধ্যেই, ১৯৭৫-পরবর্তীকালে, জাতিশোষণ রূপ নিল শ্রেণিশোষণে, পরিবর্তিত কৌশলে সামরিক শাসন নিয়ন্ত্রণ করল রাষ্ট্রযন্ত্র, স্তব্ধ করা হলো সত্যকণ্ঠ। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতা জাতির চিন্তা-চেতনায়, মন ও মননে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল নিঃসন্দেহে। বাঙালির প্রত্যাশার দিগন্ত হয়েছিল সুবিস্তৃত। কিন্তু যুদ্ধোত্তর কয়েক বছরের মধ্যেই জাতীয় চৈতন্যে প্রকাশ পেতে থাকল পরাজয়ক্লিষ্টতা। মনে হলো, ‘অতীত যেন বিদ্ররূপ করছে; বর্তমান হয়ে উঠেছে পান্ডুর, নির্ভর-অযোগ্য। জাতিসত্তা পুনরায় নিক্ষিপ্ত হলো অতীত গর্ভে বারুদ দিয়ে উড়িয়ে দেয়া হলো মূল্যবোধের স্তম্ভগুলি; গণতন্ত্র হলো সমরাস্ত্র-শাসিত; জাতিশোষণ রূপান্তরিত হলো শ্রেণিশোষণে; সহস্র কোটিপতির রসদ সরবরাহে আমাদের অস্তিত্বমূল শুকিয়ে গেল। রাজনৈতিক মঞ্চে আবির্ভূত হলো ছিন্নমূল সব ভাড়াটে কুশীলব; ছদ্মবেশের আড়ালে দেখা গেল তাদের অতীত কঙ্কাল।' জাতীয় অস্তিত্বের এই বিবর্ণ পটভূমিতে বাংলাদেশের সৃষ্টিশীল জীবনস্পর্শী চেতনালোক হয়েছে ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত। ফলে, স্কুল অর্থে স্বাধীনতা-উত্তরকালে বাংলাদেশে সাহিত্যে বিভাগোত্তর কাল অপেক্ষা একটি নতুন বিষয় সংযোজিত হয়েছে। সে-বিষয়টি হলো ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। কিন্তু গভীরতর অর্থে, চেতনার পরিমাপে মুক্তিযুদ্ধ একটি ব্যাপক এবং বহুমাত্রিক রূপ ও স্বরূপে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সাহিত্যে অভিব্যক্ত হয়েছে।