Created: 3 months ago | Updated: 9 hours ago

মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে, নিজস্ব উৎপাদিত অথবা অন্য উৎপাদকের থেকে কেনা পণ্য, অথবা পরিষেবার, পৌণঃপুনিক ক্রয়বিক্রয়, যা সমাজবদ্ধ মানুষের অভাব মোচন করে, তাকেই ব্যবসা বলা যায় l

মানুষের অভাব পূরণের জন্য যাবতীয় বৈধ অর্থনৈতিক কাজে ব্যবসায় নিয়োজিত থাকে। মানুষের জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি হচ্ছে অর্থনৈতিক কার্যাবলি। ব্যবসায় যেসব কার্যসম্পাদন করে নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো-

১. উৎপাদন: ব্যবসায়ের সকল কার্যাবলির মধ্যে প্রথম ও প্রধান কাজ হলো উৎপাদন। প্রকৃতিপ্রদত্ত সম্পদকে মানুষের ব্যবহারোপযোগী করার জন্য এদের রূপগত উপযোগ সৃষ্টি করাকে উৎপাদন বলে। প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ, উত্তোলন, শোধন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, নির্মাণ, প্রজনন ইত্যাদিকেও উৎপাদন বলা হয়।

২. ক্রয়: ব্যবসায়ের উৎপাদনকাজ অব্যাহত রাখতে কিংবা ভোগকারী জনগণের নিকট পুনঃবিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাঁচামাল ও নানাবিধ পণ্যসামগ্রী ক্রয় করতে হয়। এরূপ ক্রয়কাজ ব্যবসায়েরই অঙ্গ হসেবে বিবেচিত হয়।

৩. বিক্রয়: উদ্দেশ্যের দিক থেকে বিক্রয় ব্যবসায়ের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অর্থের বিনিময়ে পণ্যের মালিকানা হস্তান্তর করাকে বিক্রয় বলে। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ের স্বত্বগত উপযোগ সৃষ্টি হয়।

৪. অর্থসংস্থান: ব্যবসায়ের বিভিন্ন কার্যাবলির মধ্যে অর্থসংস্থান অতীব গুরুত্বপূর্ণ। উৎপাদনের অন্যান্য কার্যাবলি সম্পাদরে পূর্বে ব্যবসায়ীকে অর্থসংস্থানের কথা ভাবতে হয়। কারণ অর্থ ছাড়া কোনো ব্যবসায়ই চলতে পারে না। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত এ অর্থকে ব্যবসায়ের পুঁজি বা মূলধন বলা হয়ে থাকে। ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত তহবিল, ব্যাংক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যবসায় অর্থসংস্থানের উৎস।

৫. পরিবহন: উৎপাদনস্থল থেকে ভোগ বা বিক্রয় স্থানে পণ্য আনয়ন করার পন্থাকেই পরিবহন বলে। পরিবহন ববসায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। পরিবহনের মাধ্যমে ব্যবসায়ের উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জম শিল্প- কারখানায় আনয়ন এবং উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী উৎপাদনস্থল হতে ভোগকারী বিক্রেতাদের নিকট প্রেরণ করা হয়।

৬. গুদামজাতকরণ: পণ্য উৎপাদনের সাথে সাথেই তা ভোগকারীদের নিকট সবসময় পৌঁছে দেওয়া যায় না। তাছাড়া কোনো একটি পণ্য বছরের একটি বিশেষ মৌসুমে ব্যবহৃত হতে পারে। তাই উৎপাদনের সময় হতে ভোগের সময় পর্যন্ত পণ্যসংরক্ষণ করতে হয়। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পণ্যের গুদামজাতকরণ কাজের মাধ্যমে পণ্যসামগ্রী উৎপাদনের সময় থেকে ভোগের সয় পর্যন্ত সংরক্ষণ করে পণ্যের সময়গত উপযোগ সৃষ্টি করে।

৭. ঝুঁকি গ্রহণ ও বিমা: ব্যবসায় পরিচালনায় তথা ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পাদনে বহুবিধ ঝুঁকি বিদ্যমান থাকে। ব্যবায়ের এ সমস্ত ঝুঁকি বিমার দ্বারা হ্রাস করা যায়।

৮. বিজ্ঞাপন ও প্রচার: ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে ক্রেতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিজ্ঞাপন ও প্রচারকাজ চালাতে হয়। প্রতিটি ব্যবসায় তিষ্ঠানই তার উৎপাদিত বা সংগৃহীত পণ্যদ্রব্য ও সেবাকর্মের সংবাদ সম্ভাব্য ক্রেতাদের দৃষ্টিগোচরে আনার জন্য বিজ্ঞাপন ও জারকাজ সম্পাদন করে থাকে।

৯. হিসাবরক্ষণ: ব্যবসায়ের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে হিসাবরক্ষণ। প্রতিটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকেই তার দৈনন্দিন ব্যবসায়িক লেনদেনের হিসাব সংরক্ষণ করতে হয়।

১০. কর্মীসংক্রান্ত কাজ: ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য উপযুক্ত কর্মী নিয়োগ, তাদের প্রশিণ দান, অনুপ্রাণিতকরণ ও সঠিক কর্মীকে সঠিক কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করতে হয় এবং সেই সাথে তাদের সুযোগসুবি’র দিকে খেয়াল রাখতে হয়।

১১. বাজার গবেষণা ও পণ্য উন্নয়ন: আধুনিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে পণ্য বা সেবার বিভিন্নমুখী উপযোগ সৃষ্টি এবং পণ্যর মান উন্নয়নের জন্য বাজার গবেষণা করতে হয়। বাজার গবেষণার মাধ্যমে বাজারের গতি, চাহিদা ও সরবরাহের গ্রস্থিতি, ভোক্তার রুচি ও পছন্দ, প্রতিযোগিতার ধরন ইত্যাদি সম্পর্কিত তথ্য ও খবরাখবর সংগ্রহ করে তদনুযায়ী প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

১২. ব্যবস্থাপনা: আধুনিক ব্যবসায়ের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে ব্যবস্থাপনা। এখানে ব্যবস্থাপনা বলতেদক্ষভাবে এতদ্‌সংক্রান্ত কার্যাবলির সুষ্ঠু পরিকল্পনা, সংগঠন, নির্দেশনা, নিয়ন্ত্রণ ও এদের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানকে বোঝায় সুতরাং ব্যবসায়ের সকল কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা এবং সে উদ্দেশ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করাই হলো ব্যবস্থাপনা।

উক্তিটি সম্পূর্ণ সত্য। ব্যবসায়ের উন্নয়ন কেবল ব্যবসায়িক কৌশল বা ব্যক্তিগত উদ্যোগের উপর নির্ভর করে না, বরং এটি বহুমাত্রিক একটি প্রক্রিয়া যেখানে অর্থনৈতিক পরিবেশ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অর্থনৈতিক পরিবেশ কীভাবে ব্যবসায়কে প্রভাবিত করে:

  • মোট দেশজ উৎপাদন (GDP): একটি দেশের GDP বাড়লে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, যা কোনো ব্যবসায়ের জন্যই ইতিবাচক। উচ্চ GDP মানে বেশি গ্রাহক এবং বেশি বিক্রয়।
  • মুদ্রাস্ফীতি: অতিমাত্রায় মুদ্রাস্ফীতি ব্যবসায়ের জন্য ক্ষতিকর। এটি উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেয় এবং গ্রাহকদের ক্রয় ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়।
  • ব্যবসায় চক্র: মন্দা, পুনরুদ্ধার, উচ্চাভিলাষ এবং মন্দা— এই চক্রগুলি ব্যবসায়ের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। মন্দার সময় ব্যবসায় কমে যায়, আর উচ্চাভিলাষের সময় বৃদ্ধি পায়।
  • আয় বৈষম্য: আয় বৈষম্য বেশি হলে একটি ছোট দলের হাতে অর্থনীতির বেশিরভাগ অংশ থাকে, যা গ্রাহক বাজারকে সীমিত করে দেয়।
  • ব্যবসায়িক নীতি: সরকারের বিভিন্ন ব্যবসায়িক নীতি, যেমন করের হার, ঋণের সুদ, আমদানি-রপ্তানি শুল্ক ইত্যাদি, সরাসরি ব্যবসায়ের খরচ এবং মুনাফাকে প্রভাবিত করে।
  • বৈদেশিক বিনিয়োগ: বৈদেশিক বিনিয়োগ একটি দেশের অর্থনীতিকে উদ্দীপিত করে এবং নতুন প্রযুক্তি ও দক্ষতা আনে, যা স্থানীয় ব্যবসায়ের জন্য উপকারী হতে পারে।
  • অবকাঠামো: ভালো অবকাঠামো, যেমন সড়ক, রেল, বন্দর ইত্যাদি, ব্যবসায়কে সহজ করে এবং উৎপাদন খরচ কমিয়ে দেয়।

অংশীদারি ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি হল চুক্তি। এই চুক্তিই নির্ধারণ করে যে কীভাবে ব্যবসা পরিচালিত হবে, লাভ-লোকসান বণ্টন করা হবে এবং অংশীদারদের মধ্যে কী ধরনের সম্পর্ক থাকবে।

কেন চুক্তি এত গুরুত্বপূর্ণ?

  • স্পষ্টতা: চুক্তি স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে প্রত্যেক অংশীদারের দায়িত্ব কী, কীভাবে তারা ব্যবসায়ে অবদান রাখবে এবং কীভাবে তারা লাভের অংশ পাবে।
  • বিরোধ নিরসন: ভবিষ্যতে কোনো বিরোধ দেখা দিলে, চুক্তিই সেটি সমাধানের একটি দলিল হিসেবে কাজ করে।
  • আস্থা সৃষ্টি: একটি ভালোভাবে প্রণীত চুক্তি অংশীদারদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করে এবং ব্যবসায়ের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।
  • আইনী সুরক্ষা: চুক্তি আইনগতভাবে বাধ্যবাধক। যদি কোনো অংশীদার চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে, তাহলে অন্য অংশীদাররা আদালতে মামলা করতে পারে।

কোম্পানির কৃত্রিম ব্যক্তিসত্ত্বা বলতে, আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে, কোম্পানিকে একজন ব্যক্তির মতোই মর্যাদা দেওয়া হয়। যদিও কোম্পানি একটি আইনসৃষ্ট সংস্থা, তবুও এটি নিজের নামে সম্পত্তি কিনতে পারে, ঋণ নিতে পারে, চুক্তি করতে পারে এবং আদালতে মামলা দায়ের করতে বা মামলা মোকাবেলা করতে পারে।

স্মারকলিপি হল কোম্পানির সংবিধানের মতো একটি দলিল। এতে কোম্পানির নাম, উদ্দেশ্য, মূলধন, দায়িত্ব ইত্যাদি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকে। স্মারকলিপির বিভিন্ন ধারা মিলে কোম্পানির কার্যকলাপের সীমা নির্ধারণ করে।

স্মারকলিপির প্রধান ধারাগুলো হল:

  1. নামধারা: কোম্পানির নাম এখানে উল্লেখ করা হয়। সীমিত দায়িত্বের কোম্পানির ক্ষেত্রে নামের শেষে "লিমিটেড" শব্দটি থাকতে হবে।
  2. অবস্থান ও ঠিকানা ধারা: কোম্পানির নিবন্ধিত কার্যালয় কোথায় হবে এবং কোম্পানি কোন কোন এলাকায় কার্যকলাপ চালাতে পারবে তা এখানে উল্লেখ করা হয়।
  3. উদ্দেশ্য ধারা: কোম্পানি কী কী কাজ করবে তা এখানে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়। এই ধারাটি কোম্পানির কার্যকলাপের সীমা নির্ধারণ করে।
  4. মূলধন ধারা: কোম্পানির মোট মূলধন, শেয়ারের সংখ্যা এবং শেয়ারের মূল্য এখানে উল্লেখ করা হয়।
  5. দায় ধারা: কোম্পানির সদস্যদের দায়িত্বের পরিমাণ এখানে উল্লেখ করা হয়। সাধারণত সীমিত দায়িত্বের কোম্পানির ক্ষেত্রে সদস্যদের দায় তাদের ক্রয়কৃত শেয়ারের পরিমাণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
  6. সম্মতি ধারা: স্মারকলিপি প্রণয়নকারীরা এখানে স্বাক্ষর করে কোম্পানি গঠনের জন্য সম্মতি জানায়।

Created: 3 months ago | Updated: 10 hours ago