'সার্বজনীন পেনশন'
সরকারি চাকরিজীবীদের বাইরে বেসরকারি চাকরিজীবী বা অন্য পেশার প্রবীণদের জন্য পেনশন সুবিধা নিশ্চিত করার কার্যক্রমই সার্বজনীন পেনশন নামে পরিচিত। এই পেনশন ব্যবস্থা পুরোদমে চালু হওয়ার পর থেকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্তদেরও এই ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অর্থাৎ, তখন সরকারি-বেসরকারিতে আলাদা পেনশন বলে কিছু থাকবে না। এখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সুবিধাভোগীরা কর্মক্ষম থাকার সময় একটি হিসাবে টাকা জমা রাখবেন। তবে যারা টাকা জমাতে অক্ষম, তারাও এই সুবিধার বাইরে থাকবেন না। ২০২৩ সালের মধ্যে এই পেনশন সুবিধা চালু করা হবে। সেজন্য আইন ও বিধি তৈরি করা হবে এই সময়ের মধ্যেই। একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করে তার অধীনে চলবে এই পেনশন সুবিধা । এর আওতায় নিবন্ধিতরা ৬০ বছরের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পেনশন ভোগ করতে পারবেন। যাদের বয়স এখন ১৮ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, আপাতত তাদের এ সুবিধার অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কেন সার্বজনীন পেনশনঃ
সংবিধানের ১৫ (ঘ) অনুচ্ছেদ আছে, বার্ধক্যজনিত কারণে অভাবগ্রস্ত হলে তাদের অভাবের কারণে যাদের সাহায্য প্রয়োজন, তাদের সাহায্য নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেই আলোকে এই পেনশন স্কিম নেওয়া হচ্ছে।
সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা শিরোনামে ১৫ (ঘ) অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে: রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদনশক্তির ক্রমবৃদ্ধিসাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতিসাধন, যাহাতে নাগরিকদের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ অর্জন নিশ্চিত করা যায়: (খ) সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত মাতৃপিতৃহীন য বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুদান পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য লাভের অধিকার। পেনশন সুবিধার প্রস্তাবে যা আছেঃ
এই পেনশন ব্যবস্থায় লাভের একটি আনুমানিক হিসাবঃ যদি মাসিক চাঁদা ১০০০ টাকা, মুনাফা ১০ শতাংশ ও আনুতোষিক ৮ শতাংশ ধরা হয়, ১৮ বছর বয়সে যদি কেউ চাঁদা দেওয়া শুরু করে এবং ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত তা চালু থাকে, তাহলে ঐ ব্যক্তি অবসরের পর ৮০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি মাসে ৬৪ হাজার ৭৭৬ টাকা করে পেনশন পাবেন। যদি ৩০ বছর বয়সে চাঁদা দেওয়া শুরু হয় এবং ৬০ বছর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে, তাহলে অবসরের পর প্রতিমাসে ১৮ হাজার ৯০৮ টাকা পেনশন পাবেন। তবে চাঁদার পরিমাণ ১০০০ টাকার বেশি হলে আনুপাতিক হারে পেনশনও বেশি হবে। এটি একটি আনুমানিক হিসাব। আইন ও বিধি প্রণয়ন এবং পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার পর প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে।