বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অর্থনৈতিক বৈষম্য একটি অন্তরায়ঃ

উন্নয়ন শব্দটি সাধারণত বিস্তৃতি, অগ্রগতি, প্রগতি ও প্রবৃদ্ধি অর্থে ব্যবহৃত হয়। বিবর্তন, উত্তরণ, প্রসারণ ও বিকাশ অর্থেও এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর বিপরীত অর্থ হলো প্রত্যাবৃত্তি, প্রত্যাবর্তন ইত্যাদি । উন্নয়ন শব্দটি বর্তমান সময়ে বহুল ব্যবহৃত ও পরিচিত একটি নাম। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকেই উন্নয়ন বলা হয়ে থাকে। এ প্রবৃদ্ধি দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এটি জাতি-রাষ্ট্রকে আধুনিকায়নের দিকে এগিয়ে দেয়। এ প্রবৃদ্ধি জাতীয় আয় এবং সঞ্চয়নকে গতিশীল করে তোলে; অন্যদিকে সঞ্চয়, উৎপাদন ও বিনিয়োগের গতিশীলতা নিশ্চিত করে। উন্নয়ন শব্দটি দ্বারা দেশের সুনির্দিষ্ট কোনো একটি বিষয়ের উন্নতিকে নির্দেশ করে না। দেশের আর্থ-সামাজিক ও সামষ্টিক গতিশীলতাকে উন্নয়ন বলা হয়। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এডাম স্মিথ বলেন, দেশের ধনিক শ্রেণির পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সার্বিক পুঁজির সঞ্চয়নকে জাতীয় উন্নয়ন বলা হয়। আধুনিক যুগে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নতিকেই উন্নতির মাপকাঠি মনে করা হয়। পল স্টিটিন বলেন, 'যখন একটি দেশের সকল মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে, তখনই কেবল তাকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলা যাবে।'

উনিশ শতকের শেষের দিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নকে যুক্ত করা হয়েছে। সুতরাং উন্নয়ন বিষয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। বিংশ শতকের প্রথমদিকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গটিও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আইএলও বলেছে, 'একটি দেশের সকল মানুষের জন্য খাদ্য, পুষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, গৃহায়ণ ইত্যাদি সুবিধাপ্রাপ্তির নামই হলো উন্নয়ন।' অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেন, ‘মানুষের স্বাধীনতাকে সম্প্রসারিত করার প্রক্রিয়ার নাম হলো উন্নয়ন।' তিনি আরও বলেন, কোনো জাতি যদি নির্দিষ্ট কোনো সময়ের জন্য উন্নত জীবনযাপন করে, তাকে উন্নয়ন বলা যাবে না। উন্নয়নের নিগূঢ় অর্থ হলো, দেশের সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর ইতিবাচক উন্নতি ।

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়বৈষম্যের পেছনে রয়েছে বহু কারণ। দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে মূলত উচ্চ প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক উন্নয়ন দর্শনের পরিপ্রেক্ষিতে তার গুণগত মান কিংবা সম্পদ বণ্টনের ব্যবস্থার দিকে তুলনামূলকভাবে অনেক কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতিতে কাঠামোগত রূপান্তর হলেও তা কর্মসংস্থানমুখী উচ্চ উৎপাদনশীল শিল্পায়নের পরিবর্তে মূলত নিম্ন আয় ও অনানুষ্ঠানিক সেবা খাতেই ঘটেছে। আমাদের শিল্পায়ন মূলত হয়েছে স্বল্প মজুরির শ্রমিকনির্ভর পোশাকশিল্পকে কেন্দ্র করে। ফলে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে বহুমুখীকরণ সেভাবে হয়ে ওঠেনি। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান তেমন বাড়ছে না। অনেকেই ইতিমধ্যে একে কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি হিসেবে অভিহিত করেছেন। প্রতিবছর যে পরিমাণ তরুণ কর্মবাজারে প্রবেশ করেন, তাঁদের মধ্যে সংখ্যার বিচারে অনেকেই কাজ পাচ্ছেন না । এভাবে তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব ক্রমেই বেড়ে চলেছে এবং এটা একটা গুরুতর সংকটে রূপ নিচ্ছে।

আমাদের অনেকের কাছেই পরিচিত অর্থনীতির ‘চুইয়ে পড়া তত্ত্ব' বা ‘ট্রিকল ডাউন থিওরি', যার মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি বা উন্নয়নের সুফল সবশেষে সাধারণ জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছার কথা, তা আসলে বাংলাদেশসহ বিকাশমান দেশগুলোয় সেভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। প্রবৃদ্ধির সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক সময় মনে করা হয়, প্রবৃদ্ধির শুরুর দিকে তথা উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে আয়বৈষম্য বাড়লেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর সুষম বণ্টন নিশ্চিত হবে। ফলে ধীরে ধীরে কমবে বৈষম্য। তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অর্থনীতির এ তত্ত্ব বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই অচল, তাই প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বৈষম্যের বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনতার পরপর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে থেকে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অধ্যাপক নুরুল ইসলামের মতো অর্থনীতিবিদ সম্প্রতি এই বৈষম্যকে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে প্রধান অর্থনৈতিক বৈষম্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাসের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হতে পারে থাইল্যান্ড কিংবা মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়ার সরকার আশির দশকের শুরুতে প্রান্তিক মালে গোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করে। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে থাইল্যান্ডে আয়বৈষম্য যখন ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছিল, তখন তারা নীতি-কাঠামো সংস্কারের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয় এবং নিশ্চিত করা হয় যেন সত্যিকারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির কাছে সুবিধাগুলো পৌছায় । এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তালিকা করে কর্মসূচির প্রতিটি ধাপে নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়।

অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাসের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রয়োজন দ্বিমুখী নীতি । একদিকে যেমন দরকার উচ্চবিত্ত শ্রেণির সম্পদ সংবর্ধনের লাগাম টানা, তেমনি প্রয়োজন নিম্ন আয়ের মানুষের অবস্থার পরিবর্তন কিংবা ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি । মনে রাখা প্রয়োজন দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য নেওয়া পদক্ষেপের পাশাপাশি বৈষম্য কমানোর পরিপ্রেক্ষিতে করনীতি সংস্কারের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অনেক দেশেই আয়বৈষম্য কমাতে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হয়তো প্রগ্রেসিভ করব্যবস্থা। সে ক্ষেত্রে সরাসরি কর, অর্থাৎ আয়করের আওতায় করযোগ্য সবাইকে আনতে হবে আর করনীতি হতে হবে বৈষম্য কমানোর লক্ষ্যে। এ ক্ষেত্রে কর খাত সম্প্রসারণ করে রাজস্ব বাড়ানোর বিকল্প নেই। তার জন্য আবার প্রয়োজন সরকারের আন্তরিক রাজনৈতিক সদিচ্ছা।

করব্যবস্থার সংস্কারের পাশাপাশি সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের অবস্থার উন্নয়নে প্রয়োজন বহুমুখী প্রয়াস। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে উন্নয়নের সুফল পৌঁছে দিতে হলে প্রয়োজন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি এবং শোভন কাজের ব্যবস্থা করা, যাতে সঠিক মজুরি ও সংশ্লিষ্ট সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে শ্রমজীবী মানুষের অবস্থার পরিবর্তন এবং উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় ।

বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ব্যাপক সংস্কার। সে পরিপ্রেক্ষিতে হতদরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতা বৃদ্ধি এবং দরকার মাথাপিছু বরাদ্দে ব্যাপক পরিবর্তন আনার। সেই সঙ্গে পুরো প্রক্রিয়ায় অভিনবত্বও আনা প্রয়োজন। শহরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের জন্য নতুন নতুন কর্মসূচি ও অভিনব কায়দায় জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন। অঞ্চলভিত্তিক বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া ও দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোয় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিও জোরদার করা জরুরি। অধিকতর হারে রুগ্ন খাতগুলোয় অর্থের সংস্থানও করতে হবে।

Created: 3 months ago | Updated: 1 day ago

The Association of Southeast Asian Nations, or ASEAN, was established on 8 August 1967 in Bangkok, Thailand, with the signing of the ASEAN Declaration (Bangkok Declaration) by the Founding Fathers of ASEAN: Indonesia, Malaysia, Philippines, Singapore and Thailand.

Created: 3 months ago | Updated: 1 day ago

On 9 August 1965, Singapore separated from Malaysia to become an independent and sovereign state.

Created: 3 months ago | Updated: 2 days ago

CSE30, CSE50, CSI

Created: 3 months ago | Updated: 1 day ago

The central Bank of Nepal is Nepal Rastra Bank.

General Knowledge
6.

What is GATT?

Created: 3 months ago | Updated: 1 day ago

The General Agreement on Tariffs and Trade (GATT) is a multilateral trade agreement aimed at expanding international trade and the organization that oversees the agreement. The purpose of GATT organization, based in Geneva, is to provide a forum for discussion of world trade issues that allows for the disciplined resolution of trade disputes, based on the founding principles of the GATT which include nondiscrimination, transparency, an the most-favoured-nation (MFV) treatment.

Created: 3 months ago | Updated: 1 day ago

Three organizations of the World Bank Group:

(i) IBRD = The International Bank for Reconstruction and Development. 
(ii) IDA = The International Development Association. 
(iii) IFC = The International Finance Corporation. 

Created: 3 months ago | Updated: 2 days ago

Bangladesh rice research institute,  1970, establishe in gazipur, headquarter: dhaka

Created: 3 months ago | Updated: 1 day ago

The Australian city of Brisbane will host 2032 Summer Olympics.

Created: 3 months ago | Updated: 2 days ago

The member countries of ACU are Bangladesh, Bhutan, Iran, India, Maldives, Nepal, Pakistan, Sri Lanka and Myanmar.

General Knowledge
11.

What is IFC?

Created: 3 months ago | Updated: 2 days ago

The International Finance Corporation is an international financial institution that offers investment, advisory, and asset-management services to encourage private-sector development in less developed countries. The IFC is a member of the World Bank Group and is headquartered in Washington, D.C. in the United States.