তারিখঃ ১৭.০৮.২০১৮

সম্পাদক
দৈনিক জনকণ্ঠ
৪০, কাওরান বাজার, ঢাকা ১২১৫।

বিষয়ঃ সংযুক্ত পত্রটি প্রকাশের জন্য আবেদন।

জনাব,
আপনার বহুল প্রচারিত, ‘দৈনিক জনকণ্ঠ' পত্রিকার চিঠিপত্র কলামে নিম্নলিখিত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে বাধিত করবেন।

বিনীত
মোঃ ফাইদ ইসলাম
জাহাঙ্গীরনগর হাউজিং সোসাইটি, সাভার, ঢাকা ।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধের সচেতনতা সৃষ্টি।

সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশের একটি নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। প্রতিদিন খবরের কাগজের পৃষ্ঠা উল্টালেই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। এই সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য গাড়ির চালক, পথচারী এবং গাড়ির মালিকদের পাশাপাশি জনসাধারণ যদি নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো মেনে চলে তাহলে এই দুর্ঘটনা হার অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাবেন না ।

  • রেজিস্ট্রেশন, ট্যাক্স টোকেন, ফিটনেস, রোড পার্মিট ও ইন্সুরেন্স সাথে নিয়ে বের হবেন। 
  • মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী উভয়ে মাথায় হেলমেট পরিধান করবেন ।
  • ডানে বামে দিক পরিবর্তনে সংকেত দিবেন ।
  • যেখানে সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করবেন না ৷ 
  • নেশা বা মদ্য পান অবস্থায় গাড়ি চালাবেন না। ধৈর্য্য ও মনোযোগের সাথে গাড়ি চালাবেন ।
  • হাইড্রোলিক হর্ণ বর্জন করুন। 
  • গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইলে কথা বলা হতে বিরত থাকুন ।
  • অতিরিক্ত ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাবেন না। 
  • টার্নিং-এ ওভারটেকিং করবেন না ।
  • সামনের গাড়ি থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন ।
  • চোখে ঘুম নিয়ে অথবা অসুস্থ্য, ক্লান্ত অবপস্থায় গাড়ি চালাবেন না ।
  • একটানা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালাবেন না ।

 

যদি যাত্রী হউন

  • অন্যমনস্ক হয়ে বা মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তায় হাঁটা বা রাস্তা অতিক্রম করবেন না। 
  • রাস্তা পারাপার কিংবা গাড়িতে উঠা অবস্থায় অথবা নামাজের সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন।
  • অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই গাড়িতে কিংবা গাড়ির ছাদে ভ্রমণ করবেন না ।


যদি মালিক হউন

  • ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া চালক নিয়োগ দিবেন না ।
  • এক চালক দিয়ে একটানা ৫ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালাবেন না । 
  • যাত্রীবাহী গাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা বক্স ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখুন ।
  • রেজিস্ট্রেশন, ট্যাক্স টোকেন, ফিটনেস, রোড পার্মিট ও ইন্সুরেন্স বিহীন গাড়ি রাস্তায় নামাবেন না ।


বিনীত
মোঃ ফাইদ ইসলাম
জাহাঙ্গীরনগর হাউজিং সোসাইটি, সাভার, ঢাকা।

রেমিটেন্স ও আমাদের সামাজিক জীবন

ভূমিকাঃ প্রবাসীগণ কর্তৃক প্রেরিত অর্থই হলো রেমিটেন্স। রেমিটেন্স একটি দেশের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি লোক পৃথিবীর বিভিন্ন স্বাধীন সার্বভৌম দেশে প্রবাসী হিসেবে কর্মরত। পৃথিবীর অনেক দেশেই লোকসংখ্যা এক কোটির কম। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ জনশক্তি বাইরের দেশগুলোতে কর্মরত থাকলেও তাদের কর্তৃক প্রেরিত রেমিটেন্সের পরিমাণ খুব একটা বেশি নয়। বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী রেমিটেন্স অর্জনকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নবম এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে তৃতীয়। দক্ষিণ এশিয়ায় রেমিটেন্স আয়ে ভারত প্রথম এবং পাকিস্তান দ্বিতীয় । রেমিটেন্স প্রবাহের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারত। গত বছর দেশটির আয় হয়েছে ৬৯ বিলিয়ন ডলার। ভারতের পরেই অবস্থান আছে চীনের যার পরিমাণ ৬৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ১৩ বিলিয়ন ডলার আয় করে ৯ম স্থানে রয়েছে। 

সমাজ জীবনে রেমিটেন্সের প্রভাবঃ আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথে বড় বাধা বেকারত্ব। দারিদ্র্য বিমোচন না হলে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আশা করা যায় না। এক জরিপে দেখা গেছে, অভিবাসন দারিদ্র্য বিমোচন ও দেশের ভেতরের লোকজনের কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেখা যাচ্ছে, নারী-পুরুষ যারাই বিদেশে যাচ্ছেন, তারা তাদের পরিবার ও এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন। আবার যে এলাকা থেকে লোকজন বিদেশে যাচ্ছেন, সেখানে দেশের ভেতরের অন্য এলাকা থেকে আসা লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। এখানে স্পষ্ট, নতুন নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি করে বিপুল পরিমাণ মানবসম্পদ রফতানি করা গেলে দেশে কর্মসংস্থানের পথ সুগম হবে ।

যেসব শ্রমিক বাইরে কর্মরত তারা দেশে নিজ পরিবারের জন্য আয়ের একটি বড় অংশই পাঠিয়ে দেয়। প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স অতি দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় এটি এখন মোট বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একক বৃহৎ খাতে পরিণত হয়েছে। প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্স থেকে তাদের নিজস্ব পরিবারের ব্যয়যোগ্য আয় সমপরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই পরিবারগুলো আগের তুলনায় সচ্ছল হয় এবং ভোগে অধিক অর্থ ব্যয় করতে পারে। বিভিন্ন জরিপ থেকে মনে হয় যে রেমিটেন্সের সিংহভাগই খাদ্য, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক প্রয়োজনেই ব্যয় হয়। নিশ্চিতভাবেই বলা যায় দেশে কাজ করে তারা যে পরিমাণ আয় করতে পারত তার তুলনায় রেমিটেন্স আয় অনেক বেশি। রেমিটেন্সের একটি অংশ ভূমি ও অ্যাপার্টমেন্ট কেনা কিংবা বাড়িঘর সংস্কারের মতো কাজেও লগ্নি হয়। গ্রামীণ এলাকায় জমির দাম বৃদ্ধির পেছনে রেমিটেন্সকে অনুঘটক হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় স্যানিটেশনের মানোন্নয়নে অভিবাসী শ্রমিকদের তথাকথিত অনুৎপাদনশীল ব্যয়ের ব্যাপকতর সামাজিক ভূমিকা রয়েছে। রেমিটেন্সের কারণে ভোগ ও বিনিয়োগ উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তা অভ্যন্তরীণ সামগ্রিক ব্যয় বাড়িয়ে জিডিপি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে ।

দেশের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ও মুক্তি মানেই জনগণের সার্বিক জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ শুধু পরিবারের গৃহনির্মাণ ও ভোগেই ব্যয় হয় না। তারা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে এ অর্থ ব্যয় করেন। এটা বলা হয়ে থাকে যে, “বাংলাদেশের উন্নয়ন ও কল্যাণের জন্য বিভিন্নভাবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অবদান রাখছেন। তাদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছে"। দৈনিক প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রত্যেক পরিবার তাদের প্রবাসী নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে বার্ষিক প্রায় দুই হাজার ৫০০ ডলার প্রবাসী আয় অর্জন করে। প্রবাসী-আয় বৃদ্ধির ফলে সেখানে স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার কমে গিয়ে শিক্ষা খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

রেমিটেন্স বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাঃ চলতি জুন (২০১৮) নাগাদ অর্থাৎ এই অর্থবছর শেষে রেমিটেন্স প্রবাহ এক হাজার ৫০০ কোটি বা ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। কারণ, বর্তমানে এর প্রবৃদ্ধি ভাল। অচিরেই প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের ওপরে থাকবে। বর্তমানে ডলারের দাম কিছুটা বেড়েছে। এর প্রভাবেও রেমিটেন্স বাড়ছে। ডলারের চাহিদা মেটাতে ব্যাংক তার নিজের স্বার্থেই ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের রেমিটেন্স আনার চেষ্ট করছে। সে কারণেও রেমিটেন্স বাড়বে। এছাড়া, শ্রমশক্তি রফতানিও বেড়েছে। এরও একটি প্রভাব পড়বে ২০১৮ সালে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা আগের বছরের চেয়ে ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ কম। অক্টোবর মাস থেকে এই রেমিটেন্স ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। অক্টোবর মাসে ১১৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিটেন্স আসে দেশে। যা গত সেপ্টেম্বর মাসের চেয়ে ৩০ কোটি ৩০ লাখ ডলার বেশি। আর ২০১৬ সালের অক্টোবরের চেয়ে এটি ১৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার বেশি। প্রবাসীরা গত নভেম্বর মাসে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ১২১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার । এর আগে অক্টোবরে পাঠিয়েছিলেন ১১৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এই হিসেবে নভেম্বর মাসে বেড়েছে ৫ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। এদিকে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বরে) রেমিটেন্স আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এই ৫ মাসে দেশে ৫৭৬ কোটি ৮৫ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবাসী আয় বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এর সঙ্গে জনগণও বৈধপথে রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। এরই প্রভাব পড়েছে সার্বিক রেমিটেন্সে।

উপসংহারঃ প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স শুধু ভোগেই নয়, দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখছে । ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প উৎপাদন, স্কুল-মাদরাসা, মসজিদ, হাসপাতাল স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের এ অর্থ ব্যয় হচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচন ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে প্রবাসীদের রেমিটেন্সের ভূমিকা অসাধারণ। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্যমতে, রেমিটেন্স আয়ের প্রায় ৬৩ শতাংশ ব্যয় হয় দৈনন্দিন খরচের খাতে। এতে ওই পরিবারগুলো দারিদ্র্য দূর করতে পারে। রেমিটেন্স পাওয়ার পরে একটি পরিবারের আয় আগের তুলনায় ৮২ শতাংশ বাড়ে। রেমিটেন্স সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারে বিনিয়োগের মাধ্যমে। রেমিটেন্সের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আয় ও সঞ্চয় বাড়ার কারণে গ্রামীণ অঞ্চলে বিনিয়োগ বাড়ে। যার ফলে সেখানে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়। যারা বিদেশে যান, তাদের বেশির ভাগেরই পরিবার গ্রামে থাকা তাদের ব্যয় বেড়ে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের দারিদ্র্য দূরীকরণে প্রধান ভূমিকা রাখছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ।