১৯.০৪.২০১৯
সম্পাদক
দৈনিক আশার আলো
৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫
বিষয়ঃ সংযুক্ত পত্রটি প্রকাশের জন্য আবেদন ।
জনাব,
আপনার বহুল প্রচলিত স্বনামধন্য ‘দৈনিক আশার আলো' পত্রিকায় আমার নিম্নলিখিত জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনটি ছাপালে চিরকৃতজ্ঞ থাকব ।
বিনীত
মোঃ শফিকুল ইসলাম,
শিবালয়, মানিকগঞ্জ
শিল্প কারখানার বর্জ্য থেকে মুক্তি চাই
প্রায় ১৪০০ বর্গ কিলোমিটার এলাক জুড়ে আমাদের এই মানিকগঞ্জ জেলার বিস্তৃতি। এক সময় এই এলাকার মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস ছিলো কৃষি। সময়ের সাথে সাথে মানুষের জীবন ও জীবিকার ব্যাপক পট পরিবর্তন হয়েছে। মানিকগঞ্জ জেলার আশে পাশে বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। এখানে রয়েছে গার্মেন্ট, পাট, ঔষধ, সিরামিক, বেভারেজ ও চামড়া শিল্প। এসব শিল্প কলকারখানায় প্রায় ৮০ হাজার লোক কাজ করে। ফলে এই শিল্প কারখানাগুলো ব্যাপক পরিমাণে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু অতি দুঃখের সাথে জানানো যাচ্ছে যে, মানিকগঞ্জ জেলার বিখ্যাত দুটি নদী হচ্ছে ইছামতি ও ধলেশ্বরী। যা এই শিল্প কারখানার বর্জ্য দ্বারা মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মৎসজীবীদের আয়ের রাস্তা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই নদীর পানি এলাকাবাসীর জন্য ছিলো একটি আশির্বাদ। এলাকবাসী এই নদীর পানি দ্বারা নানা কাজে ব্যবহার করত। কিন্তু শিল্প-কলকারখানা গুলোর বর্জ্য পদার্থ পানির সাথে মিশে তাকে ভীষণভাবে দূষিত করছে। এই পানি ব্যবহার করে এলাকাবাসী পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া পানির দূর্গন্ধে এলাকার বায়ু দূষিত হচ্ছে।
অতএব, নদীর পানি রক্ষার জন্য এবং এলাকাবাসীর নিরাপদ জীবন-যাপনের জন্য কলকারখানাগুলোর বর্জ্য নিষ্কাশন পদ্ধতি একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসতে হবে এবং এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের আওতায় আনতে হবে। এছাড়া পরিবেশ বান্ধব শিল্প-কলকারখানা স্থাপনে কর্তৃপক্ষকে উৎসাহিত করতে হবে।
বিনীত
মোঃ শফিকুল ইসলাম
শিবালয়, মানিকগঞ্জ ।
বিশ্বায়ন প্রতিটি দেশ বা অঞ্চলের বৈশ্বিকভিত্তিতে অন্যান্য দেশ বা অঞ্চলের সাথে একীভূত করার প্রক্রিয়া। বহুমূখী এ প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক, কারিগরি, সামাজিক ও কৃষ্টি এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রাবলী। বহুল প্রচলিত ও শব্দটিকে অবশ্য বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। জাতীয় অর্থনৈতিক কাঠামোকে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সাথে একীভূতকরণের প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করার জন্য এ শব্দটি অধিকতর ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ ধরনের একীভূত প্রক্রিয়ায় বাণিজ্য, প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ, মূলধনের প্রবাহ, বার্হিবিশ্বে বসবাস ও কারিগরি প্রযুক্তিই হলো এ প্রক্রিয়ার চালিকা শক্তি।
বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার প্রথম ভাগ যথাক্রমে স্বর্ণমান সংক্রান্ত সংকট (১৯২০) এবং মহামন্দা (১৯৩০) সময়কালে সমাপ্ত হয়। বিশ্বায়নের আধুনিক পর্যায় শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে। পশ্চিমা বিশ্বের প্রথম সারির রাজনীতিবিদরা এ প্রক্রিয়া চালু করার উদ্যোগে গ্রহণ করেন। ব্রেটন উডস সম্মেলনের মাধ্যমে এ উদ্যোগ বাস্তবরূপ ধারণ করে। বিশ্ব বাণিজ্য ও অর্থর্থায়ন নিশ্চিত ও তা পরিবীক্ষণে জন্য একাধিক আর্ন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি ও বিশ্বায়নের সাথে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত এ সম্মেলনে গৃহীত হয়। ফলশ্রুতিতে আন্তর্জাতিক পুনর্বাসন ও উন্নয়ন (বিশ্বাব্যাংক) এবং আর্ন্তজাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তি অর্থাৎ জেনারেল এগ্রিমেন্ট অন ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ (গ্যাট) সংগঠিত হওয়ার ফলে বাণিজ্যসংক্রান্ত বাধা প্রশমিত হয়। পরবর্তী পর্যায়ে এ সংস্থা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লুটিও) নামে রূপান্তরিত হয়। এ সংস্থার কাজ হলো বাণিজ্য সংক্রান্ত বিবাদের মধ্যস্থতা ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও বাণিজ্যের বিধি প্রণয়ন করা। এ আধুনিক যুগে কিছু দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক চুক্তির উদ্ভব ঘটে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ম্যাস্ট্রিখট চুক্তি, উত্তর আমেরিকা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (নাফটা), দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (সাফটা), বঙ্গোপসাগরীয় বহুখাতসম্পদ কারিগরি ও অর্থনৈতিক চুক্তি (বিমসটেক) এবং এশীয় জাতিসমূহের সমিতি (আসিয়ান) এর কথা । এসব চুক্তির ফলে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া অধিকতর প্রসারিত হয়।
বিশ্বায়নের ইতিবাচক দিকঃ অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশ্বায়নের কিছু ইতিবাচক দিক আছে। অবশ্য তার সুফল প্রধানত উন্নত দেশগুলোই পাবে। ইতিবাচক দিকগুলো হচ্ছেঃ ১. দরিদ্র দেশগুলোতে বৈদেশিক বিনিয়োগের ফলে উৎপাদিকা শক্তি বৃদ্ধি পাবে; ২. মুক্তবাজার অর্থনীতিতে পূর্ণ প্রতিযোগিতা বাজার থাকবে। এর ফলে ক্রেতা বা ভোক্তার স্বার্থ রক্ষিত হবে; ৩. আমদানি-রপ্তানি অবাধ হওয়ায় যে কোন পণ্য বিশ্ব বাজারে ঢোকার সুযোগ পাবে; ৪. শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিনিময় অবাধ হবে; ৫. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিনিময় আরও সহজলভ্য ও গতিশীল হবে; ৬. মানুষের মেধা ও দক্ষতা বিশ্ববাজারে প্রবেশাধিকার পাবে বলে তার সঠিক মূল্যায়ন হবে; ৭. এক বিশ্ব এক জাতি ধারণার ফলে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব ও মানব সৌহার্দ্য বাড়বে; ৮. তৃতীয় দেশগুলি বৈদেশিক বিনিয়োগ সহায়তার পাশাপাশি জি.এস.পি. সুবিধা পাবে ৷
বিশ্বায়নের নেতিবাচক দিকঃ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বিশ্বায়নের ফলে উন্নত বিশ্ব সাহায্য ও সুবিধা প্রদানের নামে তৃতীয় বিশ্বে বাজার সম্প্রসারণ ঘটাবে এবং তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে পরনির্ভরশীল করে তুলবে। এদিক থেকে নেতিবাচক দিকগুলো হচ্ছেঃ
১. দেশীয় উৎপাদন কাঠামো, দেশীয় শিল্প ও দেশীয় প্রযুক্তি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
২ . উন্নয়ন সাহায্যের নামে উন্নত দেশগুলো তৃতীয় বিশ্বকে পরনির্ভরশীল করে তুলবে ।
৩. মুক্তবাজার অর্থনীতির মাধ্যমে দেশীয় পুঁজি ধনী দেশগুলোর করতলে গত হবে ।
৪. অবাধ তথ্য প্রবাহের ফলে স্থানীয় ও জাতীয় স্বকীয়ত্ব বিনষ্ট হবে।
৫. সংস্কৃতি অনুপ্রবেশ ঘটবে। সংস্কৃতির সংকরায়ণ ঘটবে এবং জাতি-সম্প্রসায়ের বিশ্বাস, আদর্শ ও মূল্যবোধ বিপর্যস্ত হবে।
৬. সকল সুবিধা ভোগ করবে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও প্রযুক্তিগতভাবে সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশগুলো । বিশ্বায়ন ও বাংলাদেশঃ বিশ্বায়নের প্রভাবে পরিবর্তনশীলতার জোয়ার লেগেছে বাংলাদেশও। তার প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে। বিশ্বায়নের প্রভাবে গার্মেন্টস শিল্প পরিণত হয়েছে অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী শিল্পে। গড়ে উঠছে অনেকগুলো রপ্তানি প্রক্রিয়া অঞ্চল বা এক্সপোর্ট প্রোসেসিং জোন। বিশ্বায়নের কল্যাণে ১ল বৈশাখের মতো নিজস্ব সংস্কৃতি সমাদৃত হয়ে উঠছে বিশ্বের মানুষের কাছে। দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন এ উৎসব দেখতে। এর বিপরীত ঘটনাও ঘটছে। বিশ্বায়নের প্রভাবে বাংলাদেশের জারি, সারি, ভাটিয়ালি গান হারিয়ে যেতে শুরু করেছে। নতুন প্রজন্মের একটা বড় অংশের হাতে বাংলা ভাষার বিকৃতি ঘটছে। 'বাংরেজি' হয়ে উঠছে তাদের বুলি। তথাকথিত ইংরেজিয়ানা বা বিদেশিয়ানার দাপট ক্রমেই বাড়ছে। অনেক দেশীয় শিল্প বিদেশের সাথে পাল্লা দিতে না পেরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে বাংলাদেশ হয়ে উঠছে বিদেশী পণ্যের বাজার। এভাবে বিশ্বায়ন নানা সুফল কুফলের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি-সংস্কৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে।