Bangladesh Bank Recruitment Test for Officer (General) Examination Held On: 25.05.2018 || 2018

All

 ভূমিকা: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ (BS-1) বাংলাদেশের প্রথম ভূস্থির যোগাযোগ উপগ্রহ। কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ১১ মে ২০১৮, বাংলাদেশ মান সময় ১২ মে ভোর ০২:১৪-তে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়। এই প্রকল্পটি তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন কর্তৃক বাস্তবায়িত হয় এবং এটি ৯ ব্লক ৫ রকেটের প্রথম পেলোড উৎক্ষেপণ ছিল।

বিটিআরসি ইতিহাস: ২০০৮ সালে কৃত্রিম উপগ্রহ নির্মাণ বিষয়ে বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কমিটি গঠন করে। এরপর ২০০৯ সালে জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালায় রাষ্ট্রীয় কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের বিষয়টি যুক্ত করা হয়। বাংলাদেশের নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের জন্য আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিটের (আহাটহুড) কাছে ইলেক্ট্রনিক আবেদন করে বাংলাদেশ। ২০১২ সালের মার্চে প্রকল্পের মূল পরামর্শক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান 'স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল' কে কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবস্থার নকশা তৈরির জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। বিটিআরসি সিস্টেম কিনতে ফ্রান্সের কোম্পানি থ্যালাস অ্যালেনিয়া স্পেসের সঙ্গে এক হাজার ৯৫১ কোটি ৭৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকার চুক্তি করে। ২০১৫ সালে বিটিআরসি রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানি ইন্টার স্পুটনিকের কাছ থেকে কক্ষপথ (অরবিটাল শিক্ষা কেনার আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে । ২০১৭ সালে কৃত্রিম উপগ্রহের সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য 'বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানী লিমিটেড' নামে। স্যাটেলাইট একটি সংস্থা গঠন করা হয়। এই সংস্থার প্রাথমিক মূলধন হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয় পাঁচ হাজার কোটি টাকা।

নির্মাণ ব্যয়

  • ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একনেক সভায় কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশে সম্প্রচার ও টেলিযোগাযোগ সেবা পরিচালনার জন্য দুই হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় ।
  • এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয় এক হাজার ৩১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের প্রায় ৪৪ শতাংশ। 
  • এ ছাড়া 'বিডার্স ফাইন্যান্সিং' এর মাধ্যমে এ প্রকল্পের জন্য এক হাজার ৬৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা নেওয়া হয় । 
  • ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) সাথে সরকারের প্রায় একহাজার
  • ৪০০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি হয়। এক দশমিক ৫১ শতাংশ হার সুদসহ ১২ বছরে ২০ কিস্তিতে এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
  • ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে রাশিয়ার সংস্থা ইন্টার স্পুটনিকের কাছ থেকে অরবিটাল স্লট অনুমোদন দেওয়া হয়। এর অর্থমূল্য ২১৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ।

 

বিবরণ :

  • বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম উপগ্রহটি ১১৯.১° ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমার ভূস্থিরস্লটে স্থাপিত হবে। 
  • জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণ করা হয়েছে।
  • ফ্রান্সের থ্যালিস অ্যালেনিয়া স্পেস কর্তৃক নকশা ও তৈরি করা হয়েছে এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তি মালিকানাধীন মহাকাশযান সংস্থা স্পেস এক্স থেকে উৎক্ষেপিত হয়েছে।
  • বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ১৬০০ মেগাহার্টজ ক্ষমতাসম্পন্ন মোট ৪০টি কেইউ এবং সি-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার বহন করবে। এটির আয়ু ১৫ বছর হওয়ার কথা ধরা হচ্ছে।
  • স্যাটেলাইটের বাইরের অংশে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকার রঙের নকশার ওপর ইংরেজিতে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু-১। বাংলাদেশ সরকারের একটি মনোগ্রামও সেখানে রয়েছে। 

 

কারিগরি বৈশিষ্ট্য: বিএস-১ উপগ্রহটি ২৬টি কে-ইউ ব্যান্ড এবং ১৪টি সি ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার সজ্জিত হয়েছে ১১৯.১° পূর্ব দ্রাঘিমার কক্ষপথের অবস্থান থেকে। কে-ইউ ব্যান্ডের আওতায় রয়েছে বাংলাদেশ, বঙ্গোপসাগরে তার জলসীমাসহ ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া অঞ্চল। সি ব্যান্ডেরও আওতায় রয়েছে এই সমুদয় অঞ্চল ।

এই কক্ষপথ থেকে বাংলাদেশ ছাড়াও সার্কভুক্ত সব দেশ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও কাজাখস্তানের কিছু অংশ এই স্যাটেলাইটের আওতায় আসবে।

উৎক্ষেপণ: বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মূল অবকাঠামো তৈরি করেছে ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস। ৩০ মার্চ ২০১৮ একটি বিশেষ উড়োজাহাজে করে ফ্রান্স থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল লঞ্চ প্যাডে স্যাটেলাইটটি পৌঁছায় ২০১৮ সালের ১২ মে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কেপ ক্যানাভেরাল থেকে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপন করা হয়। এটি ফ্যালকন ৯ ব্লক ৫ রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপন করা হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের ধাপ: বঙ্গবন্ধু ১ স্যাটেলাইট তৈরি হয়েছে ফ্রান্সের থ্যালাস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিতে। স্যাটেলাইটের কাঠামো তৈরি, উৎক্ষেপণ, ভূমি ও মহাকাশের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ভূস্তরে দুটি স্টেশন পরিচালনার দায়িত্ব এ প্রতিষ্ঠানটির। স্যাটেলাইটটি তৈরির পর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে পর্যালোচনা ও হস্তান্তর করা হয়। হস্তান্তরের জন্য বেছে নেওয়া হয় বিশেষ কার্গো বিমান। বিমানটি কেইপ কেনাভেরালের লঞ্চ সাইটে পাঠানো হয় । মহাকাশে উৎক্ষেপণের পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ পরিচালনা, সফল ব্যবহার ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য ইতোমধ্যে সরকারি মালিকানাধীন ‘বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড' নামে একটি কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। নতুন এই কোম্পানিতে কারিগরি লোকবল নিয়োগ এবং তাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেইপ কেনাভেরালে কেনেডি স্পেস সেন্টারে স্পেসএক্সের লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ নিয়ে উড়বে ‘ফ্যালকন নাইন' রকেট।

এই রকেটের রয়েছে চারটি অংশ। ওপরের অংশে থাকবে স্যাটেলাইট, তারপর থাকবে অ্যাডাপটর। এরপর স্টেজ ২ এবং সবচেয়ে নিচে থাকবে স্টেজ ১। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর রকেটের স্টেজ ১ খুলে নিচের দিকে নামতে থাকবে। এরপর চালু হবে স্টেজ ২। পুনরায় ব্যবহারযোগ্য স্টেজ ১ পৃথিবীতে এলেও স্টেজ ২ একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত স্যাটেলাইটকে নিয়ে গিয়ে মহাকাশেই থেকে যাবে।

দুইটি ধাপে এই উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়া শেষ হবে। প্রথম ধাপটি হলো লঞ্চ অ্যান্ড আরলি অরবিট ফেইজ (এলইওপি) এবং দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে স্যাটেলাইট ইন অরবিট। এলইওপি ধাপে ১০ দিন এবং পরের ধাপে ২০ দিন লাগবে। উৎক্ষেপণ স্থান থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে যাবে এই স্যাটেলাইট। ৩৫ হাজার ৭০০ কিলোমিটার যাওয়ার পর রকেটের স্টেজ ২ খুলে যাবে। স্যাটেলাইট উন্মুক্ত হওয়ার পরপর এর নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশনে চলে যাবে। এই তিন স্টেশন থেকে স্যাটেলাইটটিকে নিয়ন্ত্রণ করে এর নিজস্ব কক্ষপথে (১১৯.১° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল স্পট) স্থাপন করা হবে।

ভূ কেন্দ্র: বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম উপগ্রহটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর বাংলাদেশের ভূ-কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় ভূকেন্দ্র তৈরি করা হয়। জয়দেবপুরের ভূ-কেন্দ্রটি হবে মূল স্টেশন। আর বেতবুনিয়ার স্টেশনটি দ্বিতীয় মাধ্যম হিসেবে রাখা হয় ।

সুবিধা

  • টিভি চ্যানেলগুলো তাদের সম্প্রচার কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য স্যাটেলাইট ভাড়া করে। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট চ্যানেলের সক্ষমতা বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। আবার দেশের টিভি চ্যানেলগুলো যদি এই স্যাটেলাইটের সক্ষমতা কেনে তবে দেশের টাকা দেশেই থাকবে। এর মাধ্যমে ডিটিএইচ বা ডিরেক্ট টু হোম ডিশ সার্ভিস চালু সম্ভব ।
  • বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মোট ফ্রিকোয়েন্সি ক্ষমতা হলো ১ হাজার ৬০০ মেগাহার্টজ। এর ব্যান্ডউইথ ও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে ইন্টারনেট বঞ্চিত অঞ্চল যেমন পার্বত্য ও হাওড় এলাকায় ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া সম্ভব। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট ও ব্যাংকিং সেবা, টেলিমেডিসিন ও দূরনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রসারেও ব্যবহার করা যাবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট।
  • বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়ে। তখন এর মাধ্যমে দুর্গত এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থা চালু রাখা সম্ভব হবে।

 

এক নজরে বঙ্গবন্ধু ১

  • অপারেটর : বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানী লিমিটেড
  • মিশনের সময়কাল : ১৫ বছর
  • প্রস্তুতকারক : থেলিস অ্যালেনিয়া স্পেস
  • উৎক্ষেপণ তারিখ : ১১ মে ২০১৮/ ১২ মে, ২০১৮ (ভোর ০২:১৪বিএসটি)
  •  উৎক্ষেপণ রকেট : ফ্যালকন ৯
  • উৎহ্মেপণ স্থান : কেনেডি স্পেস সেন্টার লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯ 
  • কন্ট্রাক্টর : স্পেস এক্স
  • কক্ষপথ : ১১৯.১° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ
  • ট্রান্সপন্ডার ব্যান্ড : ১৪সি ব্যান্ড, ২৬ কেইউ ব্যান্ড
  • প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা।
  • বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মূল অবকাঠামো তৈরি করেছে ফ্রান্সের মহাকাশ সংস্থা থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস।
  • দেশের প্রথম স্যাটেলাইটটির ওজন তিন দশমিক ৭ মেট্রিক টন। 
  • এটি মহাকাশে অবস্থান করবে ১৫ বছর ।
  • মোট খরচে সরকারি অর্থ ১ হাজার ৩১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা এবং বিদেশি অর্থায়ন থাকবে ১ হাজার ৬৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ।
  • বাংলাদেশকে ঋণ দিয়েছে বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি । নিজস্ব কক্ষপথ ১১৯.১° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ ।
  • স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের পর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগবে প্রায় ২০ দিন।
  • স্যাটেলাইটে লেখা থাকবে বিবি এবং একটি সরকারি লোগো।
  • বঙ্গবন্ধু ১ এর গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় । 
  • স্যাটেলাইট তৈরির পুরো কাজটি বাস্তবায়িত হয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তত্ত্বাবধানে।

সত্য যেমন চিন্তাশক্তির প্রথম তন্ত্র তেমনি ন্যায়পরায়ণতা সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রথম গুণ । রাষ্ট্রীয় আইন এবং প্রতিষ্ঠান যত দক্ষ এবং সুসমন্বিত হোক তা যদি অন্যায্য হয় সেটা যেমন করে সংস্কার বা বিলুপ্ত করতে হয়, ঠিক তেমনি কোনো তত্ত্ব যত রুচিশীল আর মিতব্যয়ী হোক না কেন, তা যদি অসত্য হয় তবে তা অবশ্যই বাতিল করতে হবে বা তাকে সংশোধন করতে হবে। প্রত্যেকটা মানুষই কিছু অলঙ্ঘনীয় ন্যায়পরায়ণতার উপর প্রতিষ্ঠিত যার দ্বারা এমনকি সমগ্র সমাজের কল্যাণের বিষয়টিও অগ্রাহ্য করা যায় না। এজন্যই কিছু মানুষের স্বাধীনতা হরণ করে বেশি সংখ্যক মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটি ন্যায়পরায়ণতার সাথে যায় না। ন্যায়পরায়ণতা এটা মেনে নেয় না যে অধিক সংখ্যক মানুষের সুবিধা ভোগ কিছু সংখ্যক মানুষের উপর আরোপিত আত্মত্যাগের চেয়ে গুরুত্বে ছাড়িয়ে যাবে। এই কারণেই একটি ন্যায়পরায়ণ সমাজে সম নাগরিকত্বের অধিকারের বিষয়টি পরিবর্তনহীন বিষয়। তাই আইন দ্বারা যে অধিকারের প্রতিষ্ঠা হয়েছে তা রাজনৈতিক দরকষাকষির হাতিয়ার নয় কিংবা এটা কোনো সমাজের আগ্রহের হিসেবের বিষয় নয়। ভ্রান্ত তত্ত্ব বিনা বিচারে মেনে নেয়ার জন্য যে জিনিসটি কাজ করে তা হলো ভালো কোনো তত্ত্বের অপ্রাচুর্যতা। অনুরূপভাবে একটি অন্যায় তখনই সহনীয় হয়ে উঠে কেবলমাত্র যখন এরচেয়ে বড় কোনো অন্যায় এড়িয়ে চলার সুযোগ থাকে। মানবের গুণাবলীর মধ্যে প্রথম হওয়ার কারণে এই সত্য ও ন্যায়পরায়ণতার ব্যাপারে আপোসহীন হতে হবে।

তারিখঃ ০৫.০৫.২০১৮ 
বরাবর, ব্যবস্থাপক বাংলাদেশ ব্যাংক
মতিঝিল, ঢাকা-১২০০

বিষয়ঃ এজেন্ট ব্যাংকিং বিষয়ে প্রতিবেদন।

সূত্র/ স্মারক নং ঃ ০৫/০৫/২০১৮ হতে ০৮/০৫/২০১৮ পর্যন্ত সময়কালে পরিদর্শন করা হয়েছে।

জনাব,
বিনীতি নিবেদন এই যে, আমি আপনার আদেশক্রমে স্মারক নং ০৫/০৫/২০১৮ হতে ০৮/০৫/২০১৮ তরিখ অনুসারে এজেন্ট ব্যাংকিং বিষয়ে প্রতিবেদন উল্লেখ করছি।

অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে এজেন্ট ব্যাংকিং

এজেন্ট ব্যাংকিং মূলত সীমিত আর্থিক সেবা সম্বলিত একটি ব্যাংক সেবা যা চালু হবার ২ বছর পর থেকেই ব্যাংকগুলো এজেন্ট ব্যাংকিং হতে মুনাফা অর্জন শুরু করেছে। বিকল্প আর্থিক সেবা হিসেবে এই এজেন্ট ব্যাংকিং এর জনপ্রিয়তা ক্রমেই বেড়ে চলছে । অল্পসুদে টাকা রাখার জন্য ব্যাংকগুলো এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দিতে পারছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৩ সালে এই সম্পর্কিত নীতিমালা প্রণয়ন করলেও এর পূর্ণ কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৬ সালে ।

আর্থিক সুবিধা বঞ্চিত এবং যাদের কোনো ব্যাংক হিসাব নেই, তাদেরকে এই আর্থিক অন্তর্ভূক্তির সাথে যুক্ত করাই এই এজেন্ট ব্যাংকিং এর লক্ষ্য। এখন এই এজেন্ট ব্যাংকিং অল্প খরচে আমানত সংগ্রহের একটি উত্তম পন্থায় পরিণত হয়েছে। এতে . আমানত সংগ্রহে ব্যাংকগুলোর খরচ প্রায় ১ থেকে ১.৫ শতাংশ হারে কম হয়। বিকল্প ব্যাংকিং চ্যানেল হিসেবে এই এজেন্ট ব্যাংকিং অদূর ভবিষ্যতে এর প্রবৃদ্ধি অনেক বাড়বে কেননা গ্রামাঞ্চলের মানুষ অল্প খরচে আমানত রাখার জন্য এর চেয়ে সহজ কোনো পথ পেয়ে থাকে না। তারা অল্প খরচে হাতের কাছেই বিকল্প কোনো ব্যাংকিং ব্যবস্থা অন্বেষণণ করে যার পুরোটাই রয়েছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ।

বর্তমানে ১৩টি ব্যাংক এই এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার সুবিধা মানুষের দ্বার প্রান্তে পৌছে দিচ্ছে। ব্যাংকগুলো হলো ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, সোসাল ইসলামী ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, NRB কমার্শিয়াল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী ২০১৬ এর অক্টোবর-ডিসেম্বরে বিদেশ থেকে এই ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রেরিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৩০৯.৫৬ কোটি টাকা যা ২০১৭ সালের জানুয়ারি-মার্চে এসে দাঁড়ায় ৫৭২.৪৭ কোটি টাকা ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এজেন্টের সংখ্যা ছিল ২,৬০১ জন যা ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দাঁড়ায় ৩,০২৩ জন।

মতামতঃ বাংলাদেশ ব্যাংকের তফসিলভূক্ত প্রত্যেকটি ব্যাংককে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানোর জন্য আইন করতে হবে এবং প্রতিটি ইউনিয়নে যেকোনো ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং এর শাখা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে ব্যাংকিং চ্যানেলে সাধারণ মানুষে অংশগ্রহণ বাড়বে।

প্রতিবেদকের স্বাক্ষরঃ

প্রতিবেদনের বিষয়ঃ এজেন্ট ব্যাংকিং বিষয়ে প্রতিবেদন।
সময়ঃ সকাল ১১টা।
তারিখঃ ০৫.০৫.২০১৮
স্থানঃ বাংলাদেশ ব্যাংক 

প্রতিবেদকের নামঃ আনিসুর রহমান খান