মহাসমুদ্রের শত বৎসরের কল্লোল কেহ যদি এমন করিয়া বাঁধিয়া রাখিতে পারি যে, সে ঘুমন্ত শিশুটির মত চুপ করিয়া থাকিত, তবে সেই নীরব মহাশব্দের সহিত এই পুস্তকাগারের তুলনা হইত। এখানে ভাষা চুপ করিয়া আছে, প্রবাহ স্থির হইয়া আছে, মানবতাত্মার অমর অগ্নি কালাে অক্ষরের শৃঙ্খলে কালাে চামড়ার কারাগারে বাঁধা পড়িয়া আছে। ইহারা সহসা যদি বিদ্রোহী হইয়া উঠে, নিস্তব্ধতা ভাঙ্গিয়া ফেলে, অক্ষরের বেড়া দগ্ধ করিয়া একবার বাহির হইয়া আসে, কালের শখ-রন্ধ্রে এই নীরব সহস্র বৎসর যদি এককালে ফুঙ্কার দিয়া উঠে, তবে সে বন্ধনমুক্ত উচ্ছ্বসিত শব্দের স্রোতে দেশ-বিদেশ ভাসিয়া যাইত। হিমালয়ের মাথার উপরে কঠিন তুষারের মধ্যে যেমন শত শত বন্যা বাঁধা পড়িয়া আছে, তেমনি এই পুস্তকাগারের মধ্যে মানব হৃদয়ের বন্যাকে বাঁধিয়া রাখা হইয়াছে। বিদ্যুৎকে মানুষ লােহার তার দিয়া বাধিয়াছে। কিন্তু কে জানিত মানুষ শব্দকে নিঃশব্দের মধ্যে আকাশের দৈববাণীকে সে কাগজে পুরিয়া রাখিবে, অতলস্পর্শ কাল সমুদ্রের উপর কেবল একখানা বই দিয়া সাঁকো বাঁধিয়া দিবে ।