বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর ভূমিকা
ভূমিকাঃ পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা যে কোন দেশের উন্নয়নের জন্য অন্যতম উপাদান। যে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা যত উন্নত সে দেশের জাতীয় উন্নয়ন তত দ্রুত ত্বরান্বিত হয়। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ এবং এটার রাজধানী দেশের কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় রাজধানীর সাথে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যাহত হয় যেটা উন্নতির অন্তরায়। স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পরে যমুনা সেতু নির্মাণের দ্বারা দেশের উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতি হলেও দেশের দক্ষিণাঞ্চল রাজধানীর সাথে যোগাযোগ ফেরী ও লঞ্চের উপর নির্ভরশীল। এমতাবস্থায় পদ্মা সেতুর জাতীয় উন্নয়নে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে এই সেতুটি দ্বারা সমগ্র দেশের সাথে দেশের দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের জেলাসমূহের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। যেটা দেশের উন্নয়নে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
পদ্মা সেতুঃ পদ্মা সেতু দেশের বৃহত্তর নদী পদ্মার উপর প্রস্তাবিত একটি বহুমুখী সেতু। এটা দেশের বৃহত্তর প্রকল্প এবং নির্মাণ পরবর্তী সময়ে এটা হবে দেশের সর্ববৃহৎ সেতু। উত্তর দিকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া উপকূল এবং দক্ষিণ দিকে শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের জাজিরা উপকূল হল সেতুটির প্রস্তাবিত স্থান। সেতুটির দৈর্ঘ্য হবে ৬.১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ হবে ২১.১০ মিটার যেটা রেল এবং বাস উভয়ই চলাচলের উপযোগী করে তৈরী করা হবে।
জাতীয় উন্নয়ন: জাতীয় উন্নয়ন বলতে মূলত একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নকে বোঝায়। শিক্ষাব্যবস্থা, যোগাযোগব্যবস্থা, স্বাস্থ্য এমনকি খেলাধুলার উন্নতিও জাতীয় উন্নয়নের অংশ। এক কথায় কোন সরকার বা কোন নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের সার্বিক উন্নয়নই জাতীয় উন্নয়ন । জাতীয় উন্নয়নে পদ্মা সেতুর প্রভাবঃ পদ্মা সেতুটি প্রধানত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে সমগ্র দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণের নিমিত্তে নির্মিত হবে। দেশের অধিকাংশ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড রাজধানী থেকে পরিচালিত হয় কিন্তু এ উন্নয়নের সুবিধাগুলো দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছাতে পদ্মা একটি বড় বাধা। সেতুটি নির্মিত হলে দেশের কেন্দ্রীয় সুবিধা সমূহ এবং উক্ত এলাকাটির সম্ভাব্য উন্নয়ন হবে। পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা জাতীয় উন্নয়নের প্রভাবক। পদ্মা সেতু নির্মাণের যারা সৃষ্ট মাধ্যমে যে বিষয়গুলো জাতীয় উন্নয়নকে প্রভাবিত করতে পারে সেগুলো নিচে আলোচনা করা হল।
প্রাথমিক উপকারভোগী ও তাদের সুবিধাঃ প্রত্যেকটি প্রকল্পেরই প্রাথমিক উপকারভোগী থাকে যারা এটি থেকে সৃষ্ট সুবিধাসমূহ ভোগ করতে প্রাথমিকভাবে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় তিন কোটি লোক বসবাস করে যারা পদ্মা সেতু প্রকল্পটি প্রাথমিক উপকারভোগী। এ অঞ্চলের লোকজন ঢাকায় যাতায়াতে ফেরী এবং লঞ্চের উপর নির্ভরশীল। মাওয়া জাজিরা ফেরী পয়েন্টে পারাপারে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হয়। এই এলাকা থেকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসা বা জরুরি আসা লোকজন চরম ভোগান্তির শিকার হয়। সেতুটি নির্মিত হলে এই এলাকার লোকজনের ঢাকা সহ সমগ্র দেশে যাতায়াত সহজ হবে যেটা তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসায় ও প্রযুক্তি সহ সার্বিক উন্নয়নকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।
বহুমুখী যোগাযোগ সুবিধা ও তার প্রভাবঃ পদ্মা সেতু বাস ও রেল উভয়ই চলাচলের উপযোগী করে তৈরি হবে। এটির মাধ্যমে শুধু যাতায়াতেরই সুবিধা হবে না বরং এটি টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এবং প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করবে। এ সকল সুবিধা সমূহ দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নকে প্রভাবিত করবে।
ব্যবসায়িক সুবিধাঃ পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবসায় উন্নয়নের প্রধান নিয়ামক। সেতুটি নির্মিত হলে দেশের দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবসায়িক অবস্থায় ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হবে যেটা জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। অন্যদিকে ঢাকার সাথে কলকাতার যোগাযোগ সহজ হবে ফলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের উন্নয়ন ঘটবে। এলাকাভিত্তিক ব্যবসায়ের উন্নতি সবসময় জাতীয় অর্থনীতির উন্নতির কারণ হিসেবে কাজ করে ফলে জাতীয় উন্নয়নের মানও উন্নয়নের দিকে ধাবিত হয়।
মংলা বন্দরের উপর প্রভাবঃ দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুটি নৌবন্দরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় অবস্থিত। এটি হল মংলাবন্দর এবং এটার সংশ্লিষ্ট পরিবহন ব্যবস্থার পদ্মা সেতু ব্যবহারের বিকল্প নেই। সেতু দ্বারা সৃষ্ট যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি দ্বারা বন্দরটির সভাবা উপযুক্ত গ্রহণযোগ্যতা ও উপকারিতা বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ নদী পথে বাণিজ্য করা সাথে অধিক ব্যবসায়িক ক্ষেত্র তৈরী করতে পারবে ফলে দেশের সার্বিক বাণিজ্যের উন্নতি সাধিত সেটা জাতীয় উন্নয়নের কার্যকরী প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে।
জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নঃ জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নই জাতীয় উন্নয়নের বৃদ্ধি ঘটায়। আর পরিবহন ব্যবস্থা জাতীয় অর্থনীতিকে বিভিন্ন ধাপে উন্নয়নে সহযোগিতা করে। পরিবহন ব্যবস্থা জাতীয় অর্থনীতিকে বিভিন্ন মাধ্যমে সহযোগিতা করে, যেমনঃ
উৎপাদন বৃদ্ধিঃ সেতুটির মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অবস্থিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারবে কারণ তখন তাদের উৎপাদিত পণ্যগুলো সমগ্র দেশে পৌছাতে বর্তমান সময়ের চেয়ে সহজ হবে। প্রতিযোগতি বৃদ্ধিঃ এই এলাকায় অবস্থিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিযোগী হয়ে উঠবে। এতে পণ্যের সার্বিক মান বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের ব্যবসায়িক ক্ষেত্র ও বিস্তৃত হবে।
জমির মান বৃদ্ধিঃ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ার কারণে এই এলাকায় জমির মান ও বৃদ্ধি পাবে কারণ সেগুলো পূর্বের তুলনায় যে কোন কাজের জন্য অধিক যথোপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।
উপসংহারঃ জাতীয় উন্নয়ন মূলত জাতীয় অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল এবং যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা জাতীয় অর্থনীতি উন্নয়নের প্রভাবক। তনুপরি পদ্মা সেতু যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতিকল্পেই নির্মিত হবে। সুতরাং এটা বলা যায় যে, পদ্মা সেতু জাতীয় উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে।
ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যালোচনা ও ব্যাংকিং কে শক্তিশালী করার ব্যাপারে বিশ্বব্যাপী যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তা সন্তোষজনকভাবে উন্নতি লাভ করছে, কিন্তু কিছু গুরুত্বপূর্ণ অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে, পরবর্তী বিশ্বব্যাপী ব্যাংকিং খাতে যে সংকটের সৃষ্টি হবে তা প্রতিহতের জন্য ঐ সকল বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বৃদ্ধি প্রতিহত, 'এতই বড়ো আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে যে তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ'। নীতির কারণে ব্যাংকিং খাতে একটা স্থিতিশীল পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ; রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংক গঠন এড়ানো, কারণ এগুলো বিনিয়োগ নির্ভর ব্যাংক- বেসরকারি মুনাফা যাদের প্রধান উদ্দেশ্য, থেকে খুচরা ব্যাংকিং জনগণের একান্ত প্রয়োজন এ পরিণত হচ্ছে, যার দরুন ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে এবং এভাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যতের পণ্য বাজারে নিয়ে যাওয়া যা জ্বালানী দামের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে, এগুলো প্রতিরোধ করাই হচ্ছে ঐ ঐক্যমতে পৌঁছানোর বিষয়বস্তু।