স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনীতির খাতগুলোতে উন্নয়নের যে ছোঁয়া লেগেছে তার মূলে রয়েছে এদেশের মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম। কিন্তু এদেশের প্রায় ২৬ লক্ষ যুবক-যুবতী এখনো বেকারত্বের কষাঘাতে জর্জরিত। এই বেকারত্ব ঘোচাতে যুবক-যুবতীদের শুধু সরকারি-বেসরকারি চাকরীর উপর নির্ভর করলে চলবে না। চাকরী করার মন- মানসিকতার চেয়ে চাকরী দেয়ার মানসিকতা সৃষ্টি করতে পারলে তখন প্রত্যেক যুবক-যুবতী এক একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠবে। আর এজন্য নিজেকে উদ্যোক্তাদের কাতারে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। নিজের এলাকায় ছোট একটি ব্যবসায়ের মাধ্যমেই নিজেই নিজের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। পাশাপাশি আরো দশজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কিন্তু এজন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন অল্প কিছু পুঁজির। আর এই পুঁজির সরবরাহ করবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে ব্যাংক ঋণের প্রচলন বাড়াতে হবে, কারণ এই ঋণ সাধারণত কু- ঋণে পরিণত হয় না। তাছাড়া এই ঋণের যে সুফল তার Trickle down effect অনেক বেশি। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে ব্যাংক ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত নীতিগুলো অবলম্বন করা যেতে পারেঃ
ক. ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে তাদের ব্যবসায়ের জন্য ৫০,০০০ টাকা থেকে ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করতে হবে খুবই অল্প সুদে। এই সুদের হার ৫% হতে পারে।
খ. ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাঝে ঋণ বিতরণে যে প্রধান সমস্যা দেখা দেয় তা হলো ঋণের স্বপক্ষে জমির দলিল বা Mortgage যা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে বিনা জামানতে তাদের ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।
গ. রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাঝে ঋণ বিতরণে অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
ঘ. বাংলাদেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে এই ঋণ বিতরণের পর সাথে সাথেই যেন কিস্তির জন্য ব্যাংক চাপ না দেয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ যেকোনো ব্যবসায় দাঁড় করতে কমপক্ষে ছয়মাস সময় লাগে। তাই কমপক্ষে ৬ মাস কিস্তি যাতে না দেয়া লাগে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
খারাপ অভ্যাস গড়ে তোলা খুবই সহজ। কোনো একটা কাজ আমরা যত বেশি করি, কাজটি আমাদের ততোই ভালো লাগে। আবার যদি ঐ কাজটি না চালিয়ে যাই তবে আমরা অস্বস্তি বোধ করি। এটাকেই বলা হয় অভ্যাসের বল । প্রত্যেকেরই এই বলের বিরূদ্ধে লড়া উচিৎ।