Dhaka Bank Ltd. || Management Trainee Officer (04-05-2018) || 2018

All

মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে বাংলাদেশের উন্নয়নে ব্যাংকের ভূমিকা

যেকোনো দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন হচ্ছে ব্যাংকিং খাত। সার্বিক ব্যাংকিং খাতের সুস্বাস্থ্য একটি দেশের অর্থনীতির মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। কারণ ব্যাংকিং খাত ভালো থাকলেই কেবল বিনিয়োগ ত্বরান্বিত হয়, কমে বেকারত্ব। এর ফলে সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধিও বাড়তে থাকে। এভাবে দেশের অর্থনীতির আকারও বাড়তে থাকে। কাজেই দেশকে ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করতে যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রয়োজন সেজন্য ব্যাংকিং খাতকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।

যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সামষ্টিক অর্থনীতির দুটি চলককে সর্বদাই একটি স্থিতিশীল (Stable) অবস্থায় থাকতে হয়। এর মধ্যে একটি হলো সুদের হার এবং অন্যটি হলো মুদ্রাস্ফীতি। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ বা কু-ঋণের পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমিয়ে এনে ব্যাংকিংখাতে স্থিতিশীলতা আনয়ন করতে হবে। কলমানি রেট ৩% থেকে ৪% এর মধ্যে রাখতে। হবে এবং সুদের হার স্প্রেড ৫ শতাংশের নিচে রাখতে হবে যা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।

প্রথমেই আসা যাক সুদের হার নিয়ে, এই সুদের হারের সাথে দেশী ও বৈদেশিক বিনিযোগের (FDI) সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। সুদের হার এক অঙ্কে থাকলে বিনিয়োগ বেশি হয়। অর্থাৎ সুদের হার কমলে বিনিয়োগ বাড়ে। আর বিনিয়োগ বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়ে, বাড়ে সামগ্রিক চাহিদা (Aggregate Demand). বর্ধিত সামগ্রিক চাহিদা জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যা অর্থনীতির উন্নয়নের পরিমাপক। এভাবে ব্যাংক ব্যবস্থা অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে ।

এরপর আসবে মুদ্রাস্ফীতি। সামষ্টিক অর্থনীতির জনক জন মেনার্ড কেইন্সের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য Mild inflation ভালো। এজন্য তিনি ঐ দেশের GDP প্রবৃদ্ধির হারের সমান মুদ্রাস্ফীতি রাখার সুপারিশ করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংশ যখন মুদ্রাস্ফীতি প্রণয়ন করে তখন এই ব্যাপারটি মাথায় রাখা উচিৎ। এছাড়া ব্যাংকিং খাতের আধুনিক পরিবর্তনের জন্য অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউজ, ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার, মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন সিআইবি, অনলাইন ব্যাংকিং, ই-কমার্স, ইআরপি, ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ, রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যাংকিংখাতকে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর খাত হিসেবে গড়ে তুলতে হবে যা সরাসরি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

বৈদেশিক বাণিজ্য দ্রুতগতিতে বৃদ্ধির সাথে সাথে বাণিজ্য-ভিত্তিক অর্থ পাচার ব্যাংক শিল্পের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সাথে প্রদর্শিত ও অপ্রদর্শিত পণ্য, সেবা এবং অঘোষিত পণ্যের চালান জড়িত। এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যেকোন দেশের জন্য এই অর্থ পাচার একটি বড় সমস্যা, আর সম্ভবত উন্নয়নশীল দেশ হলে তো কোনো কথাই নেই। বাংলাদেশের মতো দেশ যেদেশটি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং পর্যাপ্ত রাজস্ব কর বৃদ্ধির জন্য প্রতিনিয়তই সযান করছে, তার জন্য এই অর্থ পাচারের ঘটনাটি আরো উদ্বেগের।