Pubali Bank Ltd. || Trainee Assistant Junior Officer (Cash) (15-03-2019) || 2019

All

বাংলাদেশে মাদকের বিস্তার এখন সর্বগ্রাসী রূপলাভ করেছে। মাদকের এই কালো ছোবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না স্কুলের শিশুও। কাজেই সরকারের পাশাপাশি পরিবারকেও এই মাদকের বিস্তার রোদে এগিয়ে আসতে হবে। মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে যে ধরপাকড় শুরু হয়েছে তা নিয়ে জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বেশিরভাগ মানু আত্মসমর্পণকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু তারা বিচিত্র উপায়ে এবং নতুন নতুন এজেন্ট নিয়োগ করে মাদক তথা ইয়াবা চোরাচালান অব্যাহত রাখবে। তাদের এ কথার কিছুটা বাস্তবতাও দেখা যায়। আত্মসমর্পণের দিন এবং তারাও পরবর্তী সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিপুলসংখ্যক ইয়াবা উদ্ধার করেছে। এতো কিছু করেও মাদক কারবারিদের বিষদাঁত ভেঙে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দাবি, অভিযান ও আত্মসমর্পণের পর টেকনাফ দিয়ে ইয়াবার সরবরাহ প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমে গেছে। কিন্তু পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। পৃথিবীর কোথাও মাদককে শতভাগ নির্মূল করা সম্ভব হয়নি।

মাদক কারবার যারা করে তাদের মধ্যে দেশপ্রেম, বিবেক, বিচারবুদ্ধি ও মানবিকতা লোপ পায়। তারা অমানুষ হয়ে যায়। টাকা রোজগারের নেশায় তারা কিশোর, তরুণ ও যুবকদের ধ্বংস করে দিচ্ছে। জাতিকে পঙ্গু বানিয়ে দিচ্ছে। একজন মাদক কারবারি কি একবারও চিন্তা করে না যে তার নিজের ছেলে অথবা মেয়েটি যদি মাদকাসক্ত হয় তখন তার ও তার সংসারের পরিণতি কী হবে? মাদকাসক্ত ছেলে বা মেয়ের শেষ পরিণতি মৃত্যুর দিকে ধাবিত হওয়া। সংসারের সব সুখ-শান্তি বিনষ্ট হয়ে সংসার ধ্বংসের মুখে পতিত হয়। টাকা রোজগারের জন্য কোনো লোকেরই দেশ ও জাতির জন্য এত বড় ক্ষতি করা উচিত নয়। যারা করে তারা দেশদ্রোহী, সমাজ ও মানবতাবিরোধী, তাদের সমাজচ্যুত করা উচিত এবং আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা অপরিহার্য্য।

কক্সবাজারের টেকনাফ বাংলাদেশে ইয়াবা প্রবেশের প্রধান রুট। এ কারণে টেকনাফে অসংখ্য লোক ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত। ইয়াবা তৈরি হয় মিয়ানমারে। মিয়ানমারের মাদক কারবারিরা সে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় বাংলাদেশে ইয়াবা সরবরাহ করে। গ্রেপ্তারকৃত মাদক কারবারিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, ইয়াবা ক্রয়ের জন্য কোনো অগ্রিম বা নগদ টাকা দিতে হয় না। ইয়াবার চালান কক্সবাজার জেলার সীমানা পার হলে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করতে হয়। ভারত, দুবাই, থাইল্যান্ড ইত্যাদি দেশে বসবাসরত হুন্ডি ব্যবসায়ীদের পেমেন্ট দেওয়া হয়। তারা মিয়ানমারের কারবারিদের ইয়াবার মূল্য পরিশোধ করে। এ ধরনের অনেক হুন্ডি ব্যবসায়ী আছে, যারা মাদক কারবারে অর্থ লেনদেন করে। শুধু মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তার বা তারা আত্মসমর্পণ করলে কিংবা এনকাউন্টারে নিহত হলেই মাদক কারবার বন্ধ হয়ে যাবে, এটা ভাবার সুযোগ নেই। যদি দেশের ভেতরে মাদকের চাহিদা থাকে, তবে যেকোনো উপায়েই হোক, মাদকাসক্তদের কাছে মাদক পৌঁছে যাবে। এক জরিপে দেখা গেছে যে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য হাজার হাজার কোটি ডলার ব্যয় করেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ১০ শতাংশ মাদক জব্দ করতে পারে। বাকি মাদকদ্রব্য গোপনে ও কৌশলে মাদকসেবীদের কাছে পৌঁছে যায়। এক কারবারি কারবার ছাড়লে অন্য কারবারি সৃষ্টি হবে। পুরনো রুটের পরিবর্তে নতুন নতুন রুটের সৃষ্টি হবে। নতুন নতুন পাচারকৌশলও সৃষ্টি হবে। কারণ মাদক কারবার খুবই লাভজনক একটি কারবার। একজন মাদক কারবারি এক লাখ ইয়াবা তার নির্ধারিত স্থান পার করে দিলে কমপক্ষে দুই লাখ টাকা মুনাফা পায়। কাজেই অধিক টাকা রোজগারের নেশায় কারবারি কিংবা পরিবহনকারীরা জীবনের ঝুঁকি নিতে কুণ্ঠা বোধ করে না। অপরাধীরা সব সময় মনে করে, তারা গোপনে অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে। কেউ বুঝতে বা জানতে পারবে না। তাই তারা অপরাধ সংঘটন করতে সাহস পায় এবং ঝুঁকি নিয়ে থাকে। এ কারণেই সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূল হয় না। তবে কার্যকর উদ্যোগ নিলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে ব্যাপকভাবে অভিযান করে হয়তো মাদক সরবরাহ হ্রাস করা যাবে। কিন্তু তা কত দিন বজায় থাকবে। ভেতরে চাহিদা থাকলে কোনো না কোনো পন্থায় সরবরাহ আসবে। এ জন্য সরবারাহ বনেধ যে অভিযান চলমান তার পাশাপাশি চাহিদা হ্রাসের পরিকল্পনা ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। চাহিদা হ্রাসের জন্য যারা মাদকসক্ত আছে, তাদের আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তুলতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আধুনিক ও বিশেষায়িত মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা অপরিহায্য। মাদকসেবীরা চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হলে তারা আর মাদক চাইবে না। মাদকের চাহিদা কমে যাবে। সুস্থ মাদকসেবীদের পুনর্বাসন ও ফলোআপের ব্যবস্থাও থাকতে হবে। আর নতুন করে যেন মাদকাসক্ত সৃষ্টি না হয় তার জন্য ব্যাপক গণসচেতনতা ও শিক্ষামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। মাদকের কুফল ও ভয়ানক পরিণতির কথা কিশোর, তরুণ ও যুবকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচার করে মাদকের বিরুদ্ধে তাদের মাইন্ড সেট তৈরি করে মাদকের প্রতি ভীতি জন্মাতে হবে। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া, এনজিও, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, ধর্মীয় ব্যক্তি তথা আলোম-উলামা সমাজ, সুধীসমাজ সর্বোপরি প্রতিটি পরিবার এবং সব শ্রেণি ও পেশার লোকদের মাদকবিরোধী প্রচারণায় ও গণসচেতনতামূলক কার্যক্রমে কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত করে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ব্যাপক জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততায় মাদকের ব্যাপকতা হ্রাস করা সম্ভব। সচেতনতামূলক কার্যক্রম সর্বদা চলমান রাখতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে মাদক ও জঙ্গির কুফল সম্পর্কে বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে এ বিষয়ে জ্ঞান দিতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে মাদক ও জঙ্গির কুফল সম্পর্কে বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে এ বিষয়ে জ্ঞান দিতে হবে। শুধু আইন-আদালত ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা এ সমস্যার কার্যকর সমাধান সম্ভব নয়। এটা এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।

মাদকের সরবরাহ বন্ধ, মাকসেবীদের চিকিৎসা ও পুর্নবাসন, দরিদ্র মাদক কারবারি ও পরিবহনকারীদের পুনর্বাসন এবং সবার সক্রিয় অংশগ্রহণে ব্যাপক গণসচেতনতা কার্যক্রমের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জনসাধারণের এদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন ।