শাহ মুহাম্মদ হলেন প্রাচীনতম কবি ।
বেতাল পঞ্চবিংশতি' (১৮৪৭) গ্রন্থটি রচনা করেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। এটি তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ । হিন্দি ভাষায় লালুজি রচিত 'বৈতাল পৈচ্চিসী' গ্রন্থ অবলম্বনে গ্রন্থটি রচিত। এর দশম সংস্করণে প্রথম বাংলা বিরাম চিহ্ন বা যতি চিহ্নের সার্থ প্রয়োগ করা হয়। আর ১৮৪৭ সাল থেকেই বাংলা ভাষায় যতি চিহ্ন বা বিরাম চিহ্নের প্রচলন/ব্যবহার শুরু হয়।
কাব্য বা সাহিত্য রস ৯ প্রকার। এগুলো হলোঃ শৃঙ্গার বা আদি রস, হাস্য রস, করুণ রস, রুদ্র রস, বীর রস, ভয়ংকর রস, বীভৎস রস, অদ্ভুত রস এবং শান্ত রস।
অনাশ্রম
অনাথাশ্রম = অনাথের নিমিত্ত আশ্রম (নিমিত্ত তৎপুরুষ)।
আটপৌরে
আটপৌরে = আট প্রহরের উপযুক্ত (বহুব্রীহি সমাস)।
কালসিন্ধু
কালসিন্ধু = কাল রূপ সিন্ধু (রূপক কর্মধারয় সমাস) ।
ওতপ্রোত
ওতপ্রোত = ওত ও প্রোত (দ্বন্দ্ব সমাস)
টিপসই
টিপসই = টিপের মাধ্যমে / দ্বারা সই (তৎপুরুষ সমাস)।
মনুর বংশধর
মনুর বংশধর = মানব
সাপের খোলস
সাপের খোলস = নির্মোক
সাক্ষাৎ স্রষ্টা
সাক্ষাৎ স্রষ্টা = সাক্ষী
অশ্বের ডাক
অশ্বের ডাক = হেষা ।
অরণ্যে জাত অগ্নি
অরণ্যে জাত অগ্নি = দাবানল ।
অন্ধি – সন্ধি
অন্ধি-সন্ধি (ফাঁকফোকর): এই ব্যবসার অন্ধি-সন্ধি কেবল তারই জানা আছে ।
তুলসী বনের বাঘ
তুলসী বনের বাঘ (সুবেশে দুর্বৃত্ত): সোজা মনে হলেও আসলে কৈলাশ তুলসী বনের বাঘ।
গৌরচন্দ্রিকা
গৌরচন্দ্রিকা (ভূমিকা): গৌরচন্দ্রিকা বাদ দিয়ে আসল কথা বলো ।
রবাণের লঙ্কাভাগ
রাবণের লঙ্কাভাগ (কাজ করার আগেই ফল লাভের আশা): পরীক্ষা কেবলই শেষ হলো আর এখনই রাবণের লঙ্কাভাগ নিয়ে চিন্তা ৷
হরি ঘোষের গোয়াল
হরি ঘোষের গোয়াল (বহু অপদার্থ ব্যক্তির সমাবেশ): ছাত্রাবাসটা হয়েছে হরি ঘোষের গোয়াল ।
প্রকাশনী
প্রকাশনী = প্রকাশনী ।
ক্ষনজন্মা
ক্ষনজন্মা = ক্ষণজন্মা
পিপীলিকা
পিপীলীকা = পিপীলিকা ।
মুমুর্ষূ
মুমুর্ষু = মুমূর্ষু ।
অত্যাধিক
অত্যাধিক = অত্যধিক ।
মূলভাবঃ পৃথিবীতে স্রষ্টার অপার নিয়ামতে ডুবে আছি আমরা সবাই। মহান রব আমাদের যা কিছু গ্রহণ করেন-এ কেবল তারই কৃপা ।
সম্প্রসারিত ভাবঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উল্লিখিত উক্তিটি করেছেন তাঁর রচিত ‘শেষের কবিতা' উপন্যাসে। উপন্যাসটিতে একজন পুরুষ এবং নারীর কথপকথোনের বিষয় টিকে ছাপিয়ে তিনি ঐশ্বর্যবান (ঈশ্বর) কে উদ্দেশ্য করেই যেন কথাটি বলেছেন। কাজেই মানবের প্রতি ঈশ্বর বা মহান সৃষ্টিকর্তার এই বদন্যতাকেই প্রাসঙ্গিক ভেবে জীবন পথ পাড়ি দিতে হবে। এই পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই প্রাণিকুল যত সুযোগ-সুবিধা, প্রেম-ভালবাসা, মায়া-মহব্বত ও হেদায়েত লাভ করেছে, তা একমাত্র তাঁরই দান। বিশেষ করে ভালোবাসা। এই ভালোবাসার উৎস যেন মহান রব। তাঁর থেকেই ভালোবাসার উৎপত্তি। তাঁর থেকেই ভালোবাসা সঞ্চারিত হয়েছে, ধরণীতে, মানবের অন্তরে। এই ভালোবাসার কারণে মা তার সন্তানকে, গরু তার বাছুরকে, কুকুর তার বাচ্চাকে, মুরগী তার বাচ্চাকে ভালোবাসে । এই ভালোবাসাতেই যেন মানবতা জাগ্রত হয়ে ওঠে। আর এই সমস্ত ভালোবাসার বিনিময়ে মহান রবের উদ্দেশ্যে আমরা যতটুকু ভালোবাসা প্রেরণ করতে পারি, তা গ্রহণ করে তিনি কেবলই আমাদের ঋণী করেন। এটা তাঁর দয়া ও রহম।
উপসংহারঃ প্রেম, ভালোবাসা ও মহব্বত- এসবই যদি তা হয় রহমানের জন্য। কাজেই রবকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকতে হবে। ভালোবাসতে হবে রবকে খুশি করার জন্যই । কারণ আমরা একমাত্র তার জন্যই নিবেদিত।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশকে উত্তরণের সুপারিশ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অনুমোদিত হয়েছে। পরিষদের ৭৬তম বৈঠকের ৪০তম সভায় (২৪ নভেম্বর ২০২১) এ ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ২০২১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ বা গ্র্যাজুয়েশনের মানদন্ড পূরণের মাধ্যমে উত্তরণের সুপারিশ লাভ করেছিল। সিডিপি একই সঙ্গে বাংলাদেশকে ২০২১ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরব্যাপী প্রস্তুতিকালীন সময় প্রদানের সুপারিশ করেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ ইতিমধ্যে সিডিপির সুপারিশ অনুমোদন করেছে। আশা করা হচ্ছে, পাঁচ বছর প্রস্তুতিকাল শেষে বাংলাদেশের উত্তরণ ২০২৬ সালে কার্যকর হবে। একমাত্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত উত্তরণের তিনটি মানদন্ড পূরণের মাধ্যমে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের এই অর্জন বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। প্রস্তুতিকালীন এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সব সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত থাকবে। করোনাকালে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের অনুমোদন আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। এতে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়বে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। আরও বেশি হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথ সুগম হবে ।
এলডিসি থেকে বের হলে প্রথমে যে লাভটি হবে, তা হলো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। গরিব বা স্বল্পোন্নত দেশের তকমা থাকবে না। পুরোপুরি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিবেচিত হবে, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। হবে। অর্থনৈতিক সক্ষমতার কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে বেশি সুদে অনেক বেশি ঋণ নেওয়ার সক্ষমতা বাড়বে। বেশি ঋণ নিতে পারলে অবকাঠামো ও মানবসম্পদ উন্নয়নে আরও বেশি খরচ করতে পারবে বাংলাদেশ। আবার অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা মোকাবিলায় যথেষ্ট সক্ষমতা থাকায় বিদেশি বিনিয়োগও আকৃষ্ট হবে। অবশ্য বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ পরিবেশ বড় ভূমিকা পালন করে ।
এলডিসি থেকে বের হলে সবচেয়ে সমস্যায় পড়তে হবে রপ্তানি খাতে। কারণ, এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় শুল্কমুক্ত বাণিজ্যসুবিধা পায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের তো আঞ্চলিক বা দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতেও (যেমন ভারত, চীন) এই ধরনের শুল্কসুবিধা পেয়ে থাকে। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, ২০২৬ সালে এসব সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিএসপির আওতায় এই শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে ২০২৭ সাল পর্যন্ত ।
বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে ওষুধশিল্প । এলডিসি থেকে বের হলে ওষুধশিল্পের ওপর মেধাস্বত্ব বিধিবিধান আরও কড়াকড়ি হবে। এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোকে আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠানকে মেধাস্বত্বের জন্য অর্থ দিতে দিতে হয় না। এর কারণ, মেধাস্বত্বের (পেটেন্ট) ওপর অর্থ দেওয়া হলে ওই ওষুধের দাম বেড়ে যেতে পারে। এ কারণে এলডিসির গরিব নাগরিকেরা স্বল্পমূল্যে ওষুধ পাবে না। এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ এই সুবিধা বেশি পেয়েছে। বাংলাদেশ ওষুধশিল্প একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। ২০৩৩ সালের আগে যদি কোনো দেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে গেলে ওষুধ শিল্পের এই সুবিধা থাকবে না। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এই শেষ হয়ে যাবে। এলডিসি থেকে উত্তরণ হওয়া দেশগুলোর অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেশি বলে ধরে নেওয়া হয়। তখন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সহজ শর্তের ঋণ পাওয়ার সুযোগ সীমিত হতে পারে। এ কারণে বাংলাদেশও এ ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে। এ ছাড়া এলডিসি হিসেবে যেকোনো দেশ তার দেশে উৎপাদিত পণ্য বা সেবার ওপর নগদ সহায়তা ও ভর্তুকি দিতে পারে। বাংলাদেশ এখন কৃষি ও শিল্প খাতের নানা পণ্য বা সেবায় ভর্তুকি দেয়। এসব ভর্তুকি ও নগদ সহায়তা দেওয়া বন্ধ করার চাপ আসতে পারে। এমনকি বাংলাদেশ এখন যে রপ্তানি আয় বা রেমিট্যান্স আনায় নগদ সহায়তা দেয়, তা নিয়ে আপত্তি উঠতে পারে ।
উত্তরণের সব পর্যায়েই কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে। এগুলোর মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। বাংলাদেশকে এ জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এলডিসি না থাকলে অন্যান্য দেশের রপ্তানিতে বাংলাদেশের এখনকার মতো শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে না। এলডিসি হিসেবে বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশ শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধাসহ অন্য যেসব অগ্রাধিকার পায়, তা যদি না থাকে তা হলে চ্যালেঞ্জ আরও বেড়ে যাবে। এ ছাড়া সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদের বৈদেশিক ঋণ কমে যাবে। কৃষিতে ভর্তুকি সুবিধা সীমিত করতে হবে। এ জন্য বিমসটেক, বিবিআইএনের মতো আঞ্চলিক উদ্যোগের সুবিধা কীভাবে কার্যকরভাবে নেওয়া যায়, তার জন্য আমাদের ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি থাকতে হবে । সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। কেন না শুল্কমুক্ত সুবিধা না থাকলে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে। সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগই কেবল পারে সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে।