স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় || তৃতীয় শ্রেণীর জনবল (01-02-2019) || 2019

All

                                                         ”স্বাস্থ্যসেবা একটি সার্বজনীন মানবাধিকার ও জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত”

সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির অধিকার প্রধান ৫টি মৌলিক অধিকারের একটি। এটি প্রদানে রাষ্ট্রের যেমন দায়িত্ব রয়েছে তেমনি গ্রহণের জন্যও নাগরিকের কিছু দায়িত্ব আছে। সরকার ও সাধারনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে স্বাস্থ্য সেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার কৌশলগুলো নিয়ে কাজ করা জরুরী। যেমন: সরকারি হাসপাতালগুলোতে যে দেবা পাওয়া যায় তা জনগণের কাছে প্রচার করা আবার কোন ধরনের সেবা কোথায় পাওয়া যায় তা সাধারনের মাঝে প্রচার করা। আমাদের দেশের সংবিধানেও জনস্বাস্থ্য নিয়ে সুস্পষ্ট অনুচ্ছেদ রয়েছে। সংবিধানের ১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনস্বাস্থ্যের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, জনগণের পুষ্টি স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতিকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলে গণ্য করবে এবং বিশেষত আরোগ্য প্রয়োজন বা আইনের দ্বারা নির্দিষ্ট অন্যবিধ প্রয়োজন ব্যতীত মদ ও অন্যান্য মাদক পানীয় এবং স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজ এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করণের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। 

সংবিধান পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, স্বাস্থ্য উন্নয়নকে সংবিধান যেমন রাষ্ট্রের প্রাথমিক কর্তব্য বলে উল্লেখ করেছে একই সাথে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিষয়গুলো নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও সেবা গ্রহীতাদের মাঝে প্রায়ই সমন্বয়হীনতার অভাব লক্ষ্য করা যায়। রাষ্ট্র যেখানে সাংবিধানিকভাবে মানুষের মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ ঠিক তখনই সাধারণ জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে গিয়ে সরকার বেসামাল হয়ে পড়েছে। নানাবিধ অজানা কারণে চিকিৎসকরা সাধারণ মানুষকে প্রকৃত চিকিৎসা প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছে। একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সরকারি চিকিৎসা প্রদানের জন্য যেটুকু সময় পেয়ে থাকেন নানা কারণে সেটুকু সময় সাধারণ মানুষকে তার কাছে আসতে দেয়া হয় না বা সাধারণ মানুষের কাছে থাকতে দেয়া হয় না। অনেক সময় চিকিৎসকরা যথাযথ চিকিৎসা প্রদানে নিজেরাই অমনোযোগী থাকেন। সরকারি চিকিৎসকগন সরকারি সেবায় যথেষ্ট সময় না দিয়ে ব্যক্তিগত ব্যবসা নিয়ে বেশী ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এর ফলে সেবা গ্রহণে আগত মানুষ প্রয়োজনীয় সেবা না পাওয়ায় সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে হতাশা তৈরি হচ্ছে। সরকারি সেবায় হতাশ জনগণ যখন বেসরকারি সেবা নিতে যাচ্ছেন সেখানেও অর্থ ও সেবার মানে বিস্তর ব্যবধান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উন্নত ও অনুন্নত সকল দেশ স্বাস্থ্যসেবাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রায় প্রত্যেক রাষ্ট্র নিজে অথবা বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে বিশেষ বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। ক্ষুধা, পুষ্টিহীনতা, স্বাস্থ্যহীন জনগোষ্ঠী নিয়ে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সম্ভব নয় বলে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে সবাই কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করছে। এ লক্ষ্যে ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের ১৮৯টি (বর্তমান ১৯৩) দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ সম্মিলিতভাবে একটি অঙ্গীকার করেন। মূল ৮টি বিষয়কে সামনে নিয়ে তাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে যেখানে স্বাস্থ্যসেবাকে গুরুত্ব প্রদান করা হয়। মোট ৮টি লক্ষ্যের মধ্যে ৩টি লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রাধান্য পায়। যথা: 

১. শিশু মৃত্যুহার হ্রাসকরণ, ২. মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, ৩. এইচআইভি/এইডস, ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য রোগব্যাধি দমন। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) স্বার্থক করার সময়সীমা ২০০০-২০১৫ পর্যন্ত ধরা হয়েছিল। বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে আশাতীত সাফল্য লাভ করেছে। বিশেষ করে শিশু মৃত্যুহার হ্রাস ও মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়নে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে শিশু মৃত্যুহার হ্রাস ও মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নে ‘সাউথ সাউথ পুরস্কার' লাভ করেন। এ অর্জন দেশের জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে আমাদের সফলতার চিত্র তুলে ধরে। 

২০১৫ সালে এসডিজির মেয়াদ শেষ হলে দেখা যায় যে, ৫ বছরের কম বয়সের শিশু মৃত্যুর হার ১৯৯০ সালে প্রতি হাজারে ১৬৪ জন। টার্গেট ছিল ২০১৫ সালের মধ্যে তা ৪৮ জন এ নিয়ে আশা কিন্তু, ২০১৩ সালেই তা ৪৬ জনে নামিয়ে আনে। ১৯৯০ সালে দেশে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ৫৭৪ জন। সেখানে ২০১৩ সালে তা ১৭০ জনে নেমে আসে।

 প্রশিক্ষিত ধাত্রীর মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের হার প্রায়-আটগুন বেড়েছে। এইডস/ম্যালেরিয়া যক্ষ্মা সহ অন্যান্য জটিল রোগ বিস্তার দমনে বাংলাদেশ অনেকটাই সফল। বর্তমানে এইডস আক্রমণের হার ১ শতাংশের কম। ২০০৮ সালে প্রতি লক্ষ্যে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ৮০০ জন ছিল যা ২০১৫ সালে ৪০০ জনে নেমে এসেছে। ২০১৫ সালে এসডিজির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তার অসমাপ্ত লক্ষ্যগুলো পূরণে এবং নতুন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে নতুন যে বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় তা 'টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা' বা এসডিজি নামে পরিচিত (২০১৬-২০৩০)। এতে মোট ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এসডিজিতেও স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে জোর দেয়া হয়। যেমন: স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করা ও সব বয়সের সবার কল্যাণে কাজ করা হয়। স্বাস্থ্যরক্ষায় সুপেয় পানির নিশ্চয়তা ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন।

এমডিজির মতো এসডিজি'র যথাযথ বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। অন্য স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন। উন্নত জীবনমান, গড় আয়ু ও স্বাস্থ্য প্রধান শর্তে পরিণত হয়েছে। সরক গুরুত্ব অনুধাবন করে স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে বেশকিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গৃহীত পদক্ষেপগুলো হলো:

১. স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য পর্যান্ত স্বাস্থ্য সহকারি নিয়োগ। 

২. পর্যাপ্ত পরিমাণ স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শক নিয়োগ।

৩. ইপিআই কর্মসূচীতে ১০টি রোগের টিকাদান। (এশিয়ার ১২টি দেশের মাঝে EPI অর্মসূচীতে বাংলাদেশ প্রথম) । 

৪. প্রতি ৬,০০০ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি করে মোট ১৩,২৫০টি কমিউনিটি ক্লিক করা। 

৫. উপজেলা পর্যায়ে ১৩৬টি নতুন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। 

৬. উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যার উন্নীত। 

৭. ১২টি নতুন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ। 1 

৮. ৫টি ১০০ শয্যার হাসপাতালে সিসিইউ চালুকরণ। 

৯. ৪টি মেডিকেল কলেজকে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা হয়েছে। 

১০. বিশ্বের সর্ববৃহৎ বার্ন ইনস্টিটিউট চালু করা হয়েছে। 

সরকার স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন ও সেবা প্রাপ্তির ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণেও পিছিয়ে নেই। সঠিক পর্যবেক্ষণ এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতা রাষ্ট্রকে সহায়তা দিতে পারে, সেবা প্রদানকারী ও সেবা গ্রহণকারীর দূরত্ব কমিয়ে দিতে পারে।

পুনর্বাসন ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা কাঠামো নির্ধারিত হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক যা স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টিখাতে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সামাজিক সুরক্ষা ও এর প্রভাবকে ত্বরান্বিত করতে পারে। বিদ্যমান প্রকল্পের কিছু ভৌত সুযোগ সুবিধাকে আধুনিকীকরণ বা বিস্তৃত করা কিংবা ঢেলে সাজানো হয়েছে এবং সারাদেশে নতুন আরেকটি প্রকল্প চালু করা হয়। পুনর্বাসন নীতি ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা কাঠামোয় যেসব বিষয়াদি নির্ধারিত হয়েছে তা বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য অংশীদারদের প্রকল্প অর্থায়ন নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে করা হয়েছে যা ঋণগ্রহীতাদেরকে সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ে যথাযথ মূল্যায়ন, প্রকল্প নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে প্রভাব সমূহ এবং সেগুলো প্রশমন করতে যথাযথ ব্যবস্থার নিশ্চয়তা প্রদান করে। তাছাড়া এটি বিশ্বব্যাংকের অনৈচ্ছিক পুনর্বাসনের উপর ওপি ৪.১২ বিধি মোতাবেক করা হয়েছে। এ প্রকল্পটি ২০১১ সালে নেওয়া হয়েছিল এবং সেটির ব্যাপ্তি ছিল পাঁচ বছর। সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় উন্নয়ন অংশীদারদের অনুরোধ জানালে তারা বাড়তি অর্থায়নের সম্মতি জানার। তবে উন্নয়ন অংশীদাররা আরপিএসএমএক প্রকার তাদের অবদানের ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে মতামত দিয়েছেন।

Related Sub Categories